আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে মমতা এবং অভিষেক। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি কর্মসূচিতে হাজির হওয়ার বিষয়ে তাঁর ‘নীতিগত অনীহা’ রয়েছে বলে দীর্ঘ দিন ধরেই জল্পনা ছিল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেই জানা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই অবস্থানের কথা। হাতেকলমে প্রমাণও মিলল তার।
আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে মঞ্চে উঠলেন ‘সাংসদ’ অভিষেক! কিন্তু সরকারি কর্মসূচিতে আমন্ত্রিতদের জোড়হাতে নমস্কার জানিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মঞ্চ থেকে নেমেও গেলেন তিনি। মঞ্চে বসলেন না এক মূহূর্তও। দল এবং সরকারের মধ্যে দূরত্ব তৈরির ক্ষেত্রে অভিষেকের এই অবস্থানে যে তাঁর অনুমোদন রয়েছে, মমতাও সে কথা জানিয়েছেন প্রশাসনিক বৈঠকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব পছন্দ করি এটা। সরকারি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক লোক কেন থাকবে? এখানে যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কোনও না কোনও সরকারি পদ রয়েছে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ কিন্তু ও (অভিষেক) একজন সাংসদ হিসাবে নিশ্চয়ই থাকতে পারে।’’ যদিও অভিষেক তা-ও থাকেননি। বুধবার মেঘালয়ে মমতার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন দলের নেতা হিসাবে ভোটের প্রচারে। সেই মঞ্চে তিনি থাকতে পারেন। কিন্তু সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে অভিষেক কখনও থাকেন না।
সংসদীয় গণতন্ত্র সরকার এবং দলের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায়শই সেই নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তবে বাংলায় দীর্ঘ দিন ধরে দল ও সরকারের অবস্থান পৃথক রাখার প্রথা রয়েছে। তৃণমূলের আগে বাম জমানাতেও কখনও সরকারি কর্মসূচিতে দলীয় পদাধিকারীদের দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আলিমুদ্দিনের দলীয় দফতরে বা সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশে গেলেও শৈলেন দাশগুপ্ত, অনিল বিশ্বাস বা বিমান বসুদের কখনও সরকারি কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সরকারি কর্মসূচির মঞ্চেও তাঁরা যেতেন না।
একই ভাবে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিও দল এবং সরকারের সীমারেখা মেনে চলে। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের সরকারি কর্মসূচিতে দেখা যায় না দলের সভাপতি জেপি নড্ডাকে। বা তার আগেও বিজেপির কোনও সভাপতিকে সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে দেখা যায়নি।
অভিষেক নিজেও এমন ‘সীমারেখা’ মেনে চলার পক্ষপাতী। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি বিজয়া সম্মিলনী বা বাণিজ্য সম্মেলনের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি সচেতন ভাবেই তা এড়িয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অভিষেকের সেই অবস্থানই প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুরোধে’ সাড়া দিলেও দ্রুত নমস্কারের পালা সেরে সরকারি মঞ্চ ছেড়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠকে বক্তৃতায় গোড়াতেই মমতা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছে। যে হেতু ও মেঘালয়ে গিয়েছিল। আমি ও বললাম, মঞ্চে আয়। কিন্তু ও বলল, ‘সরকারের অনুষ্ঠান। আমি রাজনৈতিক লোক। আমি যাব না।’ আমি বললাম, তুই তো এক জন সাংসদও। অন্তত এক বার এসে মানুষকে নমস্কার করার জন্য আমি অনুরোধ করব।’’
এর পরেই অভিষেককে মঞ্চে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতাকে বলেন, ‘‘যখন এসেছ, এক বার নমস্কার করে তুমি নেমে যাও। কিন্তু এসো।’’ মমতার ডাকে অভিষেক মঞ্চে উঠে দ্রুত উপস্থিত জনগণকে নমস্কার করে নেমে যান। বস্তুত, অভিষেক মঞ্চে ওঠার পরে তাঁর দিকে চেয়ার এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রীই বলেন, ‘‘ও আর বসবে না এখানে। ও বলেছে, শুধু আমি ডেকেছি বলেই এসেছে।’’
বিরোধী নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দল এবং সরকারের দূরত্ব রাখার বার্তা দিতেই ‘সচেতন’ ভাবে মমতা-অভিষেকের এই পদক্ষেপ। বিরোধীরা অহরহ অভিযোগ তোলেন, এ রাজ্যে শাসকদল এবং প্রশাসন এক হয়ে গিয়েছে। জেলায় জেলায় শাসক দলের নেতাদের কথাতেই চলছে প্রশাসন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আলিপুরদুয়ার থেকে সেই অভিযোগেরই ‘জবাব’ দিলেন মমতা এবং অভিষেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy