Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘পঞ্চায়েতে জিতলে বাসাবাড়ির কাজ ছেড়ে দিতে হবে?’ প্রশ্ন প্রার্থী ঝর্ণার

বছরখানেক আগে, ঝর্ণার স্বামী আনন্দ মণ্ডল মারা গিয়েছেন। বিধবা ভাতা এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান। তার আগে থেকেই তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন।

বাসাবাড়ির কাজ সেরে তবেই প্রচারে যান, জলপাইগুড়ির তিস্তার চরের বাসিন্দা ঝর্ণা মণ্ডলকে এ-বারে তৃণমূল প্রার্থী করেছে। সন্দীপ পাল

বাসাবাড়ির কাজ সেরে তবেই প্রচারে যান, জলপাইগুড়ির তিস্তার চরের বাসিন্দা ঝর্ণা মণ্ডলকে এ-বারে তৃণমূল প্রার্থী করেছে। সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

‘‘প্রার্থী কোথায়?’’— প্রশ্ন গৃহকর্তার। ‘‘ও বেলা আসবেন। সকালে বাসাবাড়ির কাজে যান তো!’’— উত্তর তৃণমূল কর্মীদের।

জলপাইগুড়ি শহরের গা ছুঁয়ে এক দিকে তিস্তার চর, অন্য দিকে করলা নদী, মাঝখানে গ্রাম সারদাপল্লি। এই গ্রামে সকালে প্রচার বেরিয়ে প্রতিদিন এমনই প্রশ্নের এই উত্তরই দিতে হচ্ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। বর্ষার মরসুম। রোজই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সকাল সকাল প্রচারে বেরোচ্ছেন সব দলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল প্রার্থী ঝর্ণা মণ্ডল মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগেই শর্ত দিয়েছিলেন, ‘‘বাসাবাড়ির কাজ ছাড়তে পারব না।’’ ছাড়তেও হয়নি তাঁকে। রোজ সকাল ৮টায় তিস্তার চরে টিনের চালের দরমা-বেড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি রান্নার কাজে যান। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর ২টো। ফেরার পথে বাজার করে আনেন। বছর পঁচিশের ছেলে বিকেলে বাড়ি ফিরবেন। তার আগে, নিজের এবং ছেলের জন্য রান্না করেন ঝর্ণা। তার পরে, তিস্তায় ভেসে আসা কাঠ তুলতে যান। বেলা গড়ালে ভোট-প্রচারের কাজে।

সারদাপল্লির আসনটি তৃণমূলেরই দখলে ছিল। তবে এ বার টিকিটের একাধিক দাবিদার ছিলেন সেখানে। তাঁদের কাউকে টিকিট দিলে ‘দ্বন্দ্ব’ বাড়ত বলে মনে করছিল শাসক দল। তা ছাড়া, এ বার মনোনয়ন পত্র জমা নিয়ে বিস্তর গোলমাল হয়েছে জেলা তৃণমূলে। কোথাও টিকিট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, কোথাও দ্বন্দ্ব উঠেছিল চরমে। তৃণমূলের একাংশের দাবি, সে কারণেই কোনও নেতা বা নেতার আত্মীয়কে প্রার্থী না করে দলের সাধারণ কর্মী ঝর্ণা মণ্ডলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, “তৃণমূল স্তর থেকে বেছে বেছে এ বারে পঞ্চায়েতের টিকিট দেওয়া হয়েছে। যাঁদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”

এলাকার বিজেপি প্রার্থী কুসুম মণ্ডল বলেন, “ঝর্ণা মণ্ডলকে ভাল করে চিনি। ভাল মানুষ। আমরা রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছি বলে, একে অপরের প্রশংসা করতে পারব না, এমন নয়।”

বছরখানেক আগে, ঝর্ণার স্বামী আনন্দ মণ্ডল মারা গিয়েছেন। বিধবা ভাতা এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান। তার আগে থেকেই তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। ঝর্ণা বলেন, ‘‘আমার আয়েই মূলত সংসার চলে। তাই দলকে আগেই জানিয়েছিলাম, কাজ ছাড়তে পারব না। তবে যে বাড়িগুলিতে কাজ করি, জানিয়েছি, ভোটের তিন দিন আগে থেকে ছুটি নেব। কেউই আপত্তি করেননি।’’

ভোটের মধ্যেই বর্ষা চলে আসায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন এই প্রার্থী। বাড়িতে রান্নার গ্যাস থাকলেও, বেশির ভাগ সময় উনুন জ্বলে জ্বালানি কাঠে। পাহাড় থেকে নেমে জলপাইগুড়ি দিয়ে তিস্তা নদী চলে গিয়েছে বাংলাদেশে। তিস্তার জল বাড়তেই নানা জায়গা থেকে কাঠ ভাসিয়ে আনে নদী। সে কাঠ সংগ্রহ করতে নদীতে নামেন বাসিন্দারা। ঝর্ণা মণ্ডলও আছেন সেই দলে। প্রতিদিন ঘণ্টার পরে ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। সেই সময়টা তো প্রচারে দিতে পারতেন? প্রার্থীর উত্তর, ‘‘সারা বছরের জ্বালানি কাঠ বর্ষাকালেই জোগাড় করে রাখতে হয়। প্রচারে গেলে, সে কাঠ আমায় কে এনে দেবে!’’

প্রচার ঠিকঠাক না করা গেলে, ভোটে হেরে যাওয়ার ভয় নেই? বহু দিন ধরে তৃণমূলের সমর্থক ঝর্ণা। মিছিলেও যেতেন। জীবনে প্রথম ভোটে দাঁড়ানো এ বারই। এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “বিকেলের পর থেকে যাচ্ছি তো রোজই প্রচারে। তা ছাড়া, সবাই জানেন, বাসাবাড়ির কাজ ছেড়ে বেশি দিন থাকা যায় না। তা হলে তো কাজই চলে যাবে!’’

বারান্দায় বসে ছোট মাছ কুটছিলেন ঝর্ণা। একটু আনমনা হয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘‘কেউই ঠিক করে বলতে পারছে না! আচ্ছা, পঞ্চায়েতে জিতলে কি বাসাবাড়ির কাজ ছেড়ে দিতে হবে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy