রক্ষাকর্তা: এএসআই সঞ্জয় ঘোষ, সুশান্ত চক্রবর্তী
নাগরাকাটা বাগানের খেলার মাঠে তখন কাতারে কাতারে লোক। গুজব ছড়িয়েছে, ছেলেধরা ধরা পড়েছে। তাতেই খেপে উঠেছেন বাগানের নিরীহ, শান্ত মানুষরা। ছেলেধরা সন্দেহে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে এক মহিলাকে। রোগা দোহারা গড়নের মূক ও বধির সেই মহিলা নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে করতে জল কাদায় পড়ে যান। ঠিক তখনই পুলিশের জিপ এসে থামে খানিক দূরে।
জিপে ছিলেন মালবাজার থানার দুই এএসআই সঞ্জয় ঘোষ ও সুশান্ত চক্রবর্তী। সঙ্গে চার কনস্টেবল। উত্তেজিত জনতার ভিড় দেখে প্রথমে তাঁরা হকচকিয়ে যান। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, যেমন করে হোক, ওই মহিলাকে বাঁচাতেই হবে। সঙ্গে তেমন বাহিনী নেই। তাতে ভয় না পেয়ে দু’জনে ঝাঁপিয়ে পড়েন ভিড়ে।
প্রায় দু’শো লোকের মধ্যে দিয়ে গিয়ে কাদামাঠে শুয়ে পিঠে কিল চড় ঘুষি খেয়ে প্রাণ রক্ষা করেন ওই মহিলার। তার পরে তাঁর হাত ধরে টেনে কোনও মতে ভিড় থেকে ছাড়িয়ে ছুটে জিপে গিয়ে ওঠেন। ভূটান সীমানার চা বাগান জিতি থেকে মঙ্গলবারে এ ভাবেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মরতে বসা মহিলাকে প্রাণে বাঁচান ওই দুই এএসআই সঞ্জয় এবং সুশান্ত। সঞ্জয়ের জুতোও ছিঁড়ে যায়। সেই অবস্থায় জিপ চালিয়ে তাঁরা মহিলাকে নিয়ে মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চলে আসেন। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অভিষেক মোদার কাছেও এই সাহসিকতার খবর পৌঁছে যায়। তিনি বলেন, “আমাদের দুই এএসআই ভাল কাজ করেছেন।” সঞ্জয় এবং সুশান্ত অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা কেবল নিজেদের কাজই করছেন।
গত সোমবার নাগরাকাটাতে গণপিটুনিতে মৃত্যুর পরই মালবাজার থেকে পুলিশ নাগরাকাটায় মোতায়েন করা হয়। জিতি বাগানের কাছে মালবাজারের পুলিশ গাড়িটি ছিল। তাই তাঁরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতে পারেন। নিজেদের প্রাণ সংশয় করে, দরকার হলে আবার এ ভাবে কারও প্রাণ বাঁচাবেন বলে জানান সঞ্জয় ও সুশান্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy