নাসার উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে সাহারা মরুভূমির সবুজ শ্যামল রূপ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
সবুজের ছোঁয়া লেগেছে ঊষর সাহারায়! আফ্রিকার বিশাল মরুভূমির উষ্ণ বাদামি শরীরে পড়ছে সবুজের ছোপ। বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে বাড়ছে গাছপালার পরিমাণ।
০২১৭
সম্প্রতি নাসার উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে এমন কিছু দৃশ্য যা দেখে অবাক হয়েছেন বি়জ্ঞানীরা। কৃত্রিম উপগ্রহটি সাহারা মরুভূমির সবুজ শ্যামল রূপ তুলে ধরেছে সকলের সামনে। পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক এবং রুক্ষ স্থানে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন অনেকেই।
০৩১৭
চারিদিকে শুধু ধু ধু প্রান্তর। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। দূরদূরান্তে তাকালেও মরুভূমির বুকে জলের হদিস পাওয়া দুষ্কর।
০৪১৭
নাসার উপগ্রহের ক্যামেরায় যে ছবি সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়েছে তাতে দেখা গিয়েছে মাত্র এক মাসের মধ্যেই টলটলে জলে ভরে উঠেছে প্রায় শুকনো হ্রদগুলি। সাধারণত সাহারার হ্রদগুলি শুষ্ক থাকে। বেশির ভাগ হ্রদে জলের লেশমাত্রও থাকে না।
০৫১৭
এই ঊষর, প্রাণহীন বালির প্রান্তরে এত সবুজের অস্তিত্বের কারণ কী? প্রকৃতির এই বিপরীতধর্মী আচরণের নেপথ্যে কী লুকিয়ে রয়েছে? প্রকৃতির কোন খামখেয়ালি আচরণে ভোল বদলে গেল মরু সাহারার?
০৬১৭
সাহারার এই পরিবর্তিত রূপের নেপথ্যে রয়েছে এক ঘূর্ণিঝড়। যার জেরে পাল্টে গিয়েছে সাহারার একাংশের ছবি। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফে জানানো হয়েছে ‘অতিরিক্ত ক্রান্তীয়’ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত ৭ এবং ৮ সেপ্টেম্বর সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশে বৃষ্টি হয়েছে।
০৭১৭
অতিক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে সাহারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর তাতেই কার্যত সবুজের ‘বিস্ফোরণ’ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
০৮১৭
প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফ্রিকার বিষুবরেখার উত্তরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হচ্ছে ততই উত্তরে সরে যাচ্ছে ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জ়োন বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের সীমানা।
০৯১৭
জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষক কার্স্টেন হাউস্টেইন জানিয়েছেন। সীমানাটি এই বছর সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি উত্তরে সরে গিয়েছে। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে দু’গুণ থেকে ছ’গুণ বেশি আর্দ্র হয়ে উঠছে সাহারা। তা ছাড়া গোটা পৃথিবীতে এল নিনো (উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতের পরিবর্তন) থেকে লা নিনোর (বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ) রূপান্তরের প্রভাব তো রয়েছেই।
১০১৭
মৌসুমি ঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সাহারায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। এমনকি মাঝেমাঝে বন্যাও দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া গবেষকেরা। মরক্কো, আলজিরিয়া, টিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মতো যে সব অঞ্চলে বৃষ্টি প্রায় হয়ই না, সে সব অঞ্চলগুলি কার্যত ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
১১১৭
বিশেষত মরক্কো এবং আলজিরিয়ার ওই শুষ্ক জায়গাগুলিতে এক বছরে যতটা বৃষ্টি হয়, তা দু’দিনেই হয়ে গিয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। চাদ, সুদান এবং এরিট্রিয়ার কিছু অংশে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়েছে।
১২১৭
পৃথিবীর বুকে আফ্রিকার উত্তর অংশই রুক্ষতম। কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বর মাসে অন্য বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় বন্যাও হয়েছে।
১৩১৭
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে পরিবেশগত পরিবর্তন আসছে। তার ফল ভোগ করছে সাহারাও। অবশ্য এতে শাপে বর হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ মরুভূমিটির।
১৪১৭
পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হবে, দিনের পর দিন সাহারায় তত সবুজায়ন হবে। চলতি বছরের জুনে নেচারে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে সাহারার জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকবে। সাহারায় সবুজের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু গবেষকেরা।
১৫১৭
উডল হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট পিটার ডি মেনোকাল জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি হলে বালির আস্তরণ সরে গিয়ে মাটি বেরিয়ে যায়। সেই সুযোগেই অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সবুজ গাছপালা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
১৬১৭
খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল থেকে বর্ষা ক্রমশ দক্ষিণে সরে যেতে শুরু করে, বৃষ্টির অভাবে ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয় সাহারা।
১৭১৭
তবে মালি, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কৃষকেরা গত তিন দশকে নিজেদের চেষ্টায় কয়েক কোটি গাছ লাগিয়েছেন। সাহারা মরুভূমির অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন।