Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Tea Board

চায়ের মান বাড়াতে পর্ষদের সিদ্ধান্ত ঘিরে ‘বিতর্ক’

গত বছর দেশে চা পাতা উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ১৩৯ কোটি কেজি। ডুয়ার্স এবং অসমেই উৎপাদন ছিল প্রায় ১১৫ কোটি কেজি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫৬
Share: Save:

চাহিদা ও জোগানের সমতা ফেরাতে সারা দেশের চায়ে ‘অসম মডেল’-এ শীতের শুরুতেই পাতা তোলা বন্ধ এবং ছোট বাগানের পাতার দাম নির্ধারণ— চা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই দানা বেঁধেছে নানা সংশয়। উঠেছে প্রশ্ন।

সারা দেশে অন্তত ১০ কোটি কেজি চা উদ্বৃত্ত হচ্ছে প্রতি বছর। উদ্বৃত্ত চা বিদেশে রফতানি হয় না। কারণ, বেশ কয়েক বছর রফতানি বাড়েনি। উদ্বৃত্ত চায়ের ঠেলায় দেশের বাজারে গড়পড়তা চা পাতার দাম যায় কমে। যার ফলে, চা শিল্পে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা যেমন থমকে গিয়েছে, তেমনই নতুন বিনিয়োগও আসছে না। দেশের বাজারে চাহিদা ও জোগানের সমতা ফেরাতে চা পর্ষদ এ বছর ‘ব্যতিক্রমী’ পদক্ষেপে নভেম্বরের শেষ দিন থেকে পাতা তোলা বন্ধের ঘোষণা করেছে। পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত গোটা চা শিল্পকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ২০০৭ সালের পরে এ বারে ছোট চা বাগানের পাতার দাম নির্ধারণেও হাত দিয়েছে পর্ষদ। যে সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা চলছে, তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ রাজ্যের ছোট চা পাতা উৎপাদনে খরচ হয় ১৩ টাকা কেজি প্রতি। অথচ, ২০০৭ সালে চা পর্ষদের সমীক্ষাতেই উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছিল ১৪ টাকা কেজি প্রতি। ছোট চা চাষিদের প্রশ্ন, ১৭ বছরে উৎপাদন খরচ কমে গেল কী করে?

গত বছর দেশে চা পাতা উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ১৩৯ কোটি কেজি। ডুয়ার্স এবং অসমেই উৎপাদন ছিল প্রায় ১১৫ কোটি কেজি। এই চা উদ্বৃত্ত। পর্ষদের সমীক্ষায় দেখে গিয়েছে, সারা বছর দেশের বাজারে চায়ের যা চাহিদা থাকে, তার থেকে অন্তত ১০ কোটি কেজি চা পাতা বেশি উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ, উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশই উদ্বৃত্ত থাকে। এই উদ্বৃত্তে লাগাম পরাতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে পাতা তোলা বন্ধ করতে চলেছে চা পর্ষদ। এতদিন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ সময় থেকে পাতা তোলা বন্ধ হত। পর্ষদের দাবি, ডিসেম্বরে যে চা পাতা উৎপাদিত হয়, তার মান ভাল নয়। সে কারণে ডিসেম্বরে উৎপাদন বন্ধ থাকলে এক দিকে যেমন নিম্ন মানের পাতা বাজারে ঢোকা থেকে আটকানো যাবে, তেমনই উদ্বৃত্তও কমবে। অসমে এতদিন ধরে ডিসেম্বরে পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যেত। সে কারণে এই সিদ্ধান্তকে চা মহল্লায় ‘অসম মডেল’ বলা হচ্ছে।

যদিও চা পরিচালক সংস্থার এক কর্তার দাবি, ডিসেম্বরে পাতা তোলা বন্ধ থাকলে, আয় কমে যাবে। ফলে, বাগান পরিচালনাই সংশয় হয়ে দাঁড়াবে, মজুরি দেওয়াই দায় হয়ে পড়বে। ডুয়ার্স-দার্জিলিঙের অন্যতম চা পরিচালক জীবনচন্দ্র পাণ্ডে বলেন, “এ বছর এমনিতেই পাতা নেই। চা পর্ষদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আর সময় পেল না। চা শিল্পকে বড় পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল।” ছোট চা চাষিদের সংগঠন ‘সিস্টা’-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এক দিকে, উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে, অন্য দিকে, পাতা তোলার দিনও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চা শিল্পের এতে কতটা ভাল হবে বা আদৌ হবে কি না সেটাই প্রশ্ন।”

চা পর্ষদের এক ম্যানেজার পদ মর্যাদার আধিকারিক বলেন, “সারা দেশের চা সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে। চায়ের বাজার চাঙ্গা হবে। ছোট চা বাগানের পাতার দাম নির্ধারণ এখনও প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Garden Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE