Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রুদ্ধশ্বাস জয় কালিয়াগঞ্জে

‘ফ্যাক্টর’ যা-ই হোক, টানটান উত্তেজনার ‘ম্যাচ’ শেষে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তপন দেবসিংহ, ২৪১৪ ভোটের ব্যবধানে।

জয়োল্লাস: ফল ঘোষণার পরই গণনাকেন্দ্রের বাইরে আবির খেলায় মেতে ওঠেন নেতা-কর্মীরা। ‌আছেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস (ডান দিকে) ও ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকার (একদম বাঁ দিকে)। ছবি: চিরঞ্জীব দাস

জয়োল্লাস: ফল ঘোষণার পরই গণনাকেন্দ্রের বাইরে আবির খেলায় মেতে ওঠেন নেতা-কর্মীরা। ‌আছেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস (ডান দিকে) ও ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকার (একদম বাঁ দিকে)। ছবি: চিরঞ্জীব দাস

গৌর আচার্য 
কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

যেন রুদ্ধশ্বাস টি-২০ ম্যাচ। এবং স্লগ ওভারে গিয়ে সেই খেলা বার করে আনল ‘টিম তৃণমূল’। ভোট গোনা শেষ হওয়ার আগে বিজেপি অফিস সুনসান হয়ে যাওয়া, বাতাসে সবুজ আবির ওড়ানোর বাইরে গিয়ে যদি আর একটি শব্দ উঠে আসে, তা হল ‘এনআরসি’। এই একটি শব্দকেই নিজেদের ৫৭ হাজারে এগিয়ে থাকা আসনে পতনের মূল কারণ বলে করছেন বিজেপি প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকার। উল্টো দিকে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী থেকে প্রার্থী তপন দেবসিংহ, সকলেই এক বাক্যে বলছেন, এনআরসি-র ভয়েই বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছে সাধারণ ভোটারের একটি বড় অংশ।

‘ফ্যাক্টর’ যা-ই হোক, টানটান উত্তেজনার ‘ম্যাচ’ শেষে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তপন দেবসিংহ, ২৪১৪ ভোটের ব্যবধানে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বাপের বাড়ির এলাকা এবং বামপন্থীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কালিয়াগঞ্জে এর আগে কখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। সব থেকে ভাল ফল করেছিল ছ’মাস আগের লোকসভা নির্বাচনে, ৫৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা দ্বিতীয় হয়ে। এ বারে তাই এই আসনে তাদের প্রথম জয়।

অথচ সকালে প্রথম রাউন্ডের ইভিএম যখন খোলা হয়, কখনওই মনে হয়নি দিনের শেষে ফল যাবে তৃণমূলের পক্ষে। তবে ৫৭ হাজার ব্যবধানও যে হবে না, সেটাও বুঝতে পারছিলেন অনেকে। পরের তিন রাউন্ডে এগিয়ে ছিলেন কমলই। ছন্দপতন ঘটে পঞ্চম রাউন্ডে এসে। ‘লিড’ বিজেপির পক্ষে থাকলেও তা ঝপ করে অনেকটা কমে যায়। পরের রাউন্ডে তা আরও কমে এবং সপ্তম রাউন্ডে এগিয়ে যায় তৃণমূল। এর পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাননি তপন।

জয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু, আদিবাসী, রাজবংশী— সকলেই আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’ ভোটের ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সীমান্তবর্তী রাধিকাপুর বা মোস্তাফানগর, মালগাঁওয়ের মতো সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় লিড পেয়েছে তৃণমূল। আবার বোচাডাঙার মতো রাজবংশী প্রধান অঞ্চলেও তারা এগিয়ে রয়েছে। কালিয়াগঞ্জ শহরের মতো বাঙালি-অবাঙালি ভাগাভাগির ভোটেও সাড়ে সাতশো ‘লিড’ পেয়েছে তারা।

ছ’মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন কেন? শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘এনআরসি নিয়ে মানুষ ভীত।’’ বিজেপি প্রার্থী কমল সরকারও বলেন, ‘‘আমরা এনআরসি-র আঘাত সামলাতে পারিনি। দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কালিয়াগঞ্জের মানুষের মধ্যে এনআরসির উদ্বেগ কাটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ এই নিয়ে ভয় পেয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি মেনে নিয়েছেন, রাজবংশীদের একাংশ বিজেপি ভোট দেননি। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের বেশিরভাগ ভোট তৃণমূল পেয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। জয়ের প্রধান কারণ নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী তপন দেবসিংহও কমলের সঙ্গে একমত। তবে তিনি মেনে নেন, এই জয় তাঁদের অবাক করে দিয়েছে।

দুই প্রার্থী থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন ধীতশ্রী রায়। তিনি এ দিন কিছুই বলতে চাননি। কিন্তু তাঁর বাবা তথা কংগ্রেস নেতা প্রমথনাথ রায়ের মৃত্যুতে খালি হওয়া আসনে কেন কংগ্রেস-বাম জোট ভাল ফল করতে পারল না, তাই নিয়ে ব্যাখ্যা রয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘কালিয়াগঞ্জে সিপিএমের একটি বড় অংশ কংগ্রেসকে ভোট দেয়নি। তা ছাড়া নির্বাচনের দিন বেশ কয়েকটি বুথে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। তাতেই নির্বাচনে কংগ্রেস লড়াই দিতে পারেনি।’’ তাঁর এই ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে চাননি সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল। তাঁর কথায়, ‘‘মোহিতবাবুর বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে উনি সিপিএম সম্পর্কে সঠিক কথা বলছেন না। আমরা কালিয়াগঞ্জের মানুষকে স্বৈরতান্ত্রিক তৃণমূল ও সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিরুদ্ধে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tmc Bjp Cpm Election Result Byelection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy