ছবিতে লাল বৃত্তের মধ্যে থাকা জানলা দিয়েই পড়ে গিয়েছিল দুই ছাত্র। —নিজস্ব চিত্র।
তখনও অনেকটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র ঋত্বিককুমার সিংহ। নার্সিংহোমের শয্যায় শুয়ে তার মধ্যেই জানায়, সহপাঠী ঋষভের সঙ্গে খেলার ছলে ঠেলাঠেলি হচ্ছিল। টিফিন পিরিয়ডের শেষের দিকে। ক্লাসে অন্য পড়ুয়ারাও রয়েছে। ক্লাসে শিক্ষক আসাবে তখন। সে সময় আচমকা জানলার উপর গিয়ে পড়ে দু’জন। জানলার কাচ ভেঙে তারা তিনতলা থেকে পড়ে যায় নিচে। ঋত্বিক বলে, ‘‘আচমকা জানলার উপর পড়তেই কাচ ভেঙে যায়। ঋষভ পড়ে নীচে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আমিও ওকে ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যাই। আমার জ্ঞান রয়েছে তখনও। কিন্তু ঋষভ দেখলাম বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। খুব ভয় পেয়ে যাই। আমারও শরীরে তখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছিল। মনে হচ্ছিল হাতটা ভেঙে গিয়েছে। সোজা গিয়ে কংক্রিটের উপরে পড়েছিলাম।’’
নিরাপত্তারক্ষী এবং শিক্ষকরা গিয়ে উদ্ধার করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ফুলবাড়ির নার্সিংহোমে। ঋত্বিকের কথায়, ‘‘ঋষভ আমি খুবই বন্ধু। কেমন আছে, জানি না। খুবই চিন্তা হচ্ছে। আমরা তো মারপিট করিনি। শুধুমাত্র খেলার ছলে ঠেলাঠেলি করছিলাম। তা করতে গিয়েই বিপদ হল।’’ চোখ বুজে আসে ঋত্বিকের। বাঁ হাত ভেঙেছে। ডান হাতেও গুরুতর চোট। চোট লেগেছে কোমরেও। খবর পেয়ে বাবা গোপালকুমার সিংহ এবং মা পুনম দেবী নার্সিংহোমে চলে এসেছেন। তখনও জরুরি বিভাগের করিডরে ট্রলিতে শুয়ে সে। মাকে কাঁদতে দেখে বলতে থাকে, ‘‘চিন্তা কর না, আমি ভাল হয়ে যাব।’’
ঋত্বিক কয়েক মাস আগেই ভর্তি হয়েছে এই স্কুলে। ঋষভ পড়ছে সপ্তম শ্রেণি থেকে। ঋষভের বাবা অরুণকুমার ভারতী বলছিলেন, ‘‘গান ভালবাসত ও। ব্যাডমিন্টন খেলত। কিছু দিন আগে অনলাইনে হকি স্টিক কিনেছে খেলার জন্য।’’ অরুণ বলছিলেন, ‘‘হস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরলেই আমাকে শাসন করত। আমি তো ডায়াবেটিসের রোগী। নজর রাখত যাতে, আমি চায়ে চিনি না খাই। জুতো পুছে দিত। গাড়ি ধুয়ে দিত।’’ ক্লাসে পঞ্চম হত ঋষভ।
রাতে যখন ছেলের মৃতদেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মর্গে নেওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য, তখন অন্ধকার নেমে এসেছে অরুণবাবুর চোখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy