স্কুল জীবনের শেষে দলবেঁধে নিজস্বী। বালুরঘাটের একটি স্কুলে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
স্বর্ণাভ নন্দী, বালুরঘাট (৪৯২)
বালুরঘাট হাইস্কুলের এই ছাত্র উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে দ্বিতীয়। সোমবারই দিল্লি রওনা হয়েছেন। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল পরীক্ষা দেবেন। ২৯ মে পরীক্ষা। সেখানে না হলে কলকাতায় এনআরএসে পড়ার কথা ভাববেন স্বর্ণাভ। ৪৯২ নম্বর পেয়ে বিজ্ঞানের এই ছাত্রটি ভিন রাজ্যে পড়াশোনা করতেই বেশি আগ্রহী। এই স্কুলের আর এক বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র কৌশিক সাহা পেয়েছে ৪৭৭র। বংশীহারি হাইস্কুলের ছাত্রী মধুরিমা বর্মন এবং আদর্শ হাইস্কুলের ছাত্রী নবনীতা দাস দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৪। কিংবা গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের ছাত্র বোধিসত্ত্ব মিত্র-ও এবারে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৬২ নম্বর পেয়ে সকলের নজর কেড়েছে। সকলেরই প্রথম পছন্দ কলকাতা বা অন্যত্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মনালী দাস, আলিপুরদুয়ার (৪৬০)
ইংরেজি নিয়ে পড়তে চান। প্রথম পছন্দ বেথুন কলেজ। দ্বিতীয় পছন্দ রবীন্দ্রভারতী।
নভোনীল দেব, কোচবিহার (৪৯২)
লক্ষ্য, দেশের কোনও না কোনও আইআইটি। ভিন রাজ্যেই অগ্রাধিকার। তালিকায় রয়েছে খড়গপুর আইআইটির নামও। কোচবিহারে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চলতি বছরেই চালু হওয়ার কথা। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নভোনীলের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনার জন্য অনুরোধ করেছেন। নভোনীলের বাড়ির লোকজনরা শুধু শুনেছেন।
মনীষ সরকার, আলিপুরদুয়ার (৪৭৪)
সর্বভারতীয় জয়েন্ট দিয়ে দেশের প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চান। না হলে অঙ্ক নিয়ে পড়বেন। প্রথম পছন্দ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় পছন্দ প্রেসিডেন্সি। তাঁর কথায় স্নাতক স্তরে পড়াশোনার সুবিধা অনেক বেশি কলকাতায়।
সৌমদীপ দাস, আলিপুরদুয়ার (৪৬৬)
উত্তরবঙ্গের বাইরে কোথাও সরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। সুযোগ না মিললে অঙ্ক কিংবা পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়বেন। প্রথম পছন্দ প্রসিডেন্সি, দ্বিতীয় সেন্ট জেভিয়ার্স তৃতীয় পছন্দ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেন? উত্তর অনেক, ল্যাবের সুবিধে, কোচিং ক্লাস ও পরিকাঠামোগত সুবিধা। তাই কলকাতার কোথাও ভর্তি হতে চান।
দীপঙ্কর শীল, রায়গঞ্জ (৪৪৬)
বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাই ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক অভাবের কারণে কলকাতার কোনও কলেজে পড়ার ক্ষমতা নেই। ভূগোলে অনার্স নিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান।
রিম নন্দী, রায়গঞ্জ (৪৬৩)
জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষা দিয়েছেন। অগস্টে ফলাফল প্রকাশিত হবে। সুযোগ পেলে ডাক্তারি পড়বেন। আপাতত রসায়ন বা বায়োলজি অনার্স নিয়ে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ভর্তি হতে চান। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজ থেকে কলকাতার বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনার মান ও পরিবেশ ভাল। তা ছাড়া, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যে ভাবে রাজনীতি হয়, তার গুণমানও ভাল নয়। কলকাতার কলেজগুলিতে রাজনীতিরও একটি মান থাকে। সেই রাজনীতি কখনওই পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে না বলে মনে করেন।
সৌম্যদ্বীপ বসু, জলপাইগুড়ি (৪৭৬)
স্কুলে প্রথম সৌম্যদ্বীপের যাদবপুর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে আছে। এ বছর এখানে ভর্তি হয়ে আগমীবার আইআইটিতে ভর্তির পরীক্ষা দেবে। সুযোগ পেলে সেখানেই পড়বে। দ্বিতীয় পছন্দ ফিজিক্সে অনার্স। এগুলো সবই রাজ্যের মধ্যে আছে। সৌম্যদ্বীপের আর একটি ইচ্ছে আছে। যে পরীক্ষায় সে বসতে চলেছে তা হল ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চে ভর্তির পরীক্ষা। এখানে পাশ করলে সেখানে সে পড়বে।
মহম্মদ শাহেনসাহ, রায়গঞ্জ (৪৮০)
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বা স্কটিশে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়তে চান। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়ার সুযোগ থাকলেও তাঁর বন্ধু ও অভিভাবকদের ধারণা, কলকাতার ওই দুই কলেজে মান অনেক ভাল।
দীবা মন্ডল, জলপাইগুড়ি (৪৬৯)
ভূগোল নিয়ে প্রেসিডেন্সি অথবা কোনও ভাল কলেজে পড়ার ইচ্ছে। কলকাতাতে সুযোগ না পেলে শিলিগুড়ির কলেজে পড়বেন। না হলে, জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজে পড়বেন। ভূগোলে সুযোগ না পেলে তার পরবর্তী পছন্দ ইংরেজি।
অন্তরীপা মণ্ডল, শিলিগুড়ি (৪৭৫)
যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছেন। মেধা তালিকায় শিলিগুড়ি পিছিয়ে পড়ার জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকখানি দায়ী বলে মনে করেন তাঁর মা তথা পেশায় জলপাইগুড়ি বিএড কলেজের শিক্ষিকা কাকলি দেবী। তিনি বলেন, ‘‘গৃহশিক্ষক ছাড়া পড়া হবে না এ ধরনের একটা ব্যাপার বিভিন্ন স্কুলগুলির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেই সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এটা কেন হবে? স্কুলের পড়ানোটাই এমন হবে যাতে গৃহশিক্ষকের কাছে কেউ যেতে না পারলেও তার সমস্যা না হয়। তার উপর লাগাম ছাড়া ছুটি-ছাটায় শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিলিগুড়িতেও প্রতিভা রয়েছে। তবে রাজনীতি সেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’’
অঙ্কিতা দেবনাথ, জলপাইগুড়ি (৪৬৫)
প্রথম ইচ্ছে ডাক্তারি পড়ার। জয়েন্টে বসেছেন। অঙ্কিতার দ্বিতীয় ইচ্ছে কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার। যদি কেমেস্ট্রিতে না সুযোগ পান, তা হলে তার তৃতীয় পছন্দ বায়োলজি নিয়ে পড়ার।
সুচন্দা পাল, জলপাইগুড়ি (৪৩৬)
স্কুলে প্রথম সুচন্দার আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স পড়ার ইচ্ছে আছে। ইংরেজি না পেলে বাংলায় অনার্স পড়বে। সুচন্দা আনন্দচন্দ্র কলেজে সুযোগ না পেলে জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহিলা কলেজ থেকে পড়বে। জলপাইগুড়ি থেকেই তার পড়ার ইচ্ছে।
ভাস্কর বর্মন, জলপাইগুড়ি (৪৬০)
বাবার সামান্য জমি আছে। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে এবং কৃষি শ্রমিকের কাজ করে তাদের সংসার চলে। বাইরে গিয়ে পড়ার সামর্থ তার নেই। ভাস্করের ভুগোল অনার্স নিয়ে জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে পড়ার ইচ্ছে। না পেলে ওই কলেজ থেকেই সংস্কৃত বা বাংলা নিয়ে পড়বেন।
চয়ন বিশ্বাস, শিলিগুড়ি (৪৬৭)
যাদবপুরে যাওয়ার ইচ্ছে। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় বাইরে পড়তে যাওয়া হবে কি না বুঝতে পারছেন না। তাঁর মতে ভাল কিছু করতে গেলে বাইরে যাওয়া দরকার।
বিপ্লব পাল, শিলিগুড়ি (৪৬১)
পড়তে চান ইতিহাস বা ভূগোল নিয়ে। বাইরে পডতে পারলেই ভাল হতো বলে মনে করেন। আর্থিক সমস্যায় তা না হলে শিলিগুড়ি কলেজেই হয়তো পড়তে হবে।
দেবব্রত মিত্র, অধ্যাপক উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
ভাল ছেলেমেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারিই পড়তে চায়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে সেই সুযোগ এত কম যে, তারা অন্যত্র তো চলে যাবেই। তাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন এই ব্যাপারে নজর দেয়।
সাগরিকা দত্ত, প্রধান শিক্ষিকা
পড়াশোনার বিষয়টি আমাদের আরও ভাল করে দেখতে হবে। না হলে ফল একইরকম হতে থাকবে।
ধীরেন ঝম্পটি, প্রধানশিক্ষক
বিজ্ঞান শাখার ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি অধিকাংশ স্কুলে ল্যাবরেটরি ঠিক নেই। যন্ত্রাংশের অভাব আছে। থিয়োরি পড়ার পর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা হোঁচট খাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy