প্রতীকী ছবি।
এনআরসি নিয়ে লোকসভা ভোটের সময় থেকেই প্রচার, পাল্টা প্রচার শুরু করেছিল দু’পক্ষ। এখন উত্তরবঙ্গে একাধিক মৃত্যুর সঙ্গে এনআরসি আতঙ্কের প্রসঙ্গ জড়িয়ে গিয়েছে। মাঝে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিছুটা থিতিয়ে যাওয়ার পরে বর্তমান আবহে ফের তা সামনে চলে এসেছে। সেই তালে তাল মিলিয়েই বুধবার এক দিকে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব এই আতঙ্কের জন্য দায়ী করেন বিজেপিকে। উল্টো দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন, এনআরসি হবেই, আর তাতে কোনও হিন্দুর নামই বাদ যাবে না। তবে বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের যে আতসকাচের নীচে আনা হবে, তা-ও বুঝিয়ে দেন তিনি।
লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে খোদ অমিত শাহই জানিয়েছিলেন, এই রাজ্যেও এর পরে এনআরসি হবে। তাঁদের লক্ষ্য যে বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশ, সেটাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি অসমে এনআরসি-র তালিকা প্রকাশের পরে বিষয়টি নিয়ে ধন্দ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ওই তালিকায় বড় সংখ্যায় হিন্দুদের নামও বাদ গিয়েছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে আতঙ্ক ছড়াবে না কেন? এই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দিলীপও। মঙ্গলবার এক মহিলা তাঁকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। বুধবার জনসংযোগের এক সভায় দলীয় কর্মীরা প্রসঙ্গটি তোলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছিল, দিলীপ শিলিগুড়ির সভায় এই নিয়ে মন্তব্য করবেন। করলেনও। তিনি বলেন, ‘‘আগে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাশ হবে। সমস্ত উদ্বাস্তুকে নাগরিক করে নেওয়া হবে। তার পর এনআরসি হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘একজন হিন্দুর নামও এনআরসি থেকে বাদ যাবে না। তবে মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেব।’’ দিলীপ জানান, তাঁরা বুথ স্তর থেকে প্রচারে নামবেন।
এর পাল্টা হিসেবে তৃণমূল এনআরসি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানান গৌতম দেব। রাজ্য জুড়ে এনআরসি আতঙ্কের জন্য বিজেপিকে দায়ী করে গৌতম বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ২ কোটি মানুষের নাম বাদ দেবেন। ওঁরাই আতঙ্ক তৈরি করছে। সেই আতঙ্কে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৫ জন। মানুষের মনোবল বাড়ানো, তাদের শক্তি জোগানো প্রয়োজন। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাব। এনআরসির ভয়াবহতা নিয়েও মানুষকে সচেতন করা জরুরি। একজনেরও নাম বাদ দিতে দেব না।’’
এনআরসির বিরোধিতায় পাহাড় থেকেই প্রচার শুরু করবে তৃণমূল। ২৭ সেপ্টেম্বর কালিম্পংয়ে একটি বৈঠক হবে। পাহাড়ের পাশাপাশি সেখানে দলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির নেতারাও থাকবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর কার্শিয়াংয়ে পাহাড়ের মোর্চা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবে তৃণমূল। এনআরসির বিরোধিতায় দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ে নাগরিক সভা করা হবে বলেই জানিয়েছেন পাহাড় তৃণমূলের সভাপতি লাল বাহাদুর রাই।
তৃণমূল নেতাদের আরও দাবি, জলপাইগুড়িতে তিন জন, কোচবিহার ও বালুরঘাটে একজন করে এনআরসির আতঙ্কে মারা গিয়েছেন। জলপাইগুড়িতে সোমবার তিন জনের বাড়ি গিয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং গৌতম দেব। সোমবারই এনআরসি নিয়ে একটি দলীয় বৈঠক হয়েছে বলে জানান গৌতম। তিনি আরও জানান, পাহাড় ছাড়াও তরাই এবং ডুয়ার্সেও এনআরসি তৃণমূলের তরফে সভা করবেন।
উল্টো দিকে, দিলীপ ঘোষ জানান, তৃণমূলের প্রচারের বিরোধিতায় অসম সীমানা থেকে গোটা উত্তরবঙ্গে তাদের দলের প্রতিটি কমিটি প্রচার করবে। কেন এনআরসি জরুরি, তৃণমূল যা বলছে তা যে সঠিক নয়— তা তথ্য দিয়ে মানুষকে বোঝাবেন বিজেপি কর্মীরা। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দলের বক্তব্য আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্ক তৈরি করেও তৃণমূল যাতে বাড়তি সুবিধা না পায়, সে জন্য প্রতিটি স্তর থেকে পাল্টা প্রচার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy