সিকিমে তিস্তার তাণ্ডবের খণ্ডচিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে বিপুল জলরাশি তিস্তা নদী দিয়ে বয়ে চলেছে। নদীর তাণ্ডবে আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এই পরিস্থিতিতে তিস্তার ধ্বংসলীলার জেরে পুজোর মুখে সিকিম ঘুরতে যাওয়া বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যেই। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বাংলার অন্তত দু’হাজার পর্যটক সিকিমে আটকে পড়েছেন। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ফলে আপাতত অবরুদ্ধ ফেরার পথও। রাজ্য প্রশাসনের তরফে সিকিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বাস, ট্রেন এবং বিমান ভরে বাংলা-সহ দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে যান সিকিমে। প্রতি বার পুজোর মুখে সেই ভিড় আরও বাড়ে। তেমনই পর্যটকবোঝাই সিকিমে তিলধারণের জায়গা ছিল না হোটেল, অতিথি নিবাসে। কিন্তু বুধবার সকাল দেখল এক অন্য সিকিমকে। তিস্তায় হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলা। ভেসে গিয়েছে বহু সেতু। জলমগ্ন বাড়িঘর। কিছু জায়গায় জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। স্বভাবতই তিস্তার ধ্বংসলীলায় কত প্রাণহানি হয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। সূত্রের খবর, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উত্তর সিকিমের বিকচুতে তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পরিস্থিতি জরিপ করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর। জলপাইগুড়ির সমস্ত স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। তবে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেকায়দায় সিকিম ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরা।
সিকিম যাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথটি যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (সাবেক ৩১এ জাতীয় সড়ক) হয়ে শিলিগুড়ি দিয়ে। ফলে পর্যটকেরা প্রায় সকলেই ওই পথ ধরেই সিকিম যান। বুধবার সকাল থেকে তিস্তার তাণ্ডবে সেই পথ অবরুদ্ধ। বুধবার কাকভোরে বিপর্যয়ের পর থেকে তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, ঠিক কত সংখ্যক পর্যটক বর্তমানে সিকিমে রয়েছেন, তারও কোনও স্পষ্ট হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। সেই হিসাব কষা শুরু হয়েছে। নতুন করে কোনও বিপর্যয় না হলে বিকেল নাগাদ সঠিক সংখ্যা জানা যেতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সিকিমে কত পর্যটক আটকে রয়েছেন তার সঠিক কোনও খবর নেই। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে অনুরোধ, এয়ারলিফ্টিং ছাড়া এত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। সিকিমের সঙ্গে সমতলের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। গত কাল (মঙ্গলবার) রাত থেকে সিকিমের স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। চিন্তা বাড়ছে। বিকল্প পথগুলিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও বাংলা থেকে আরও একটি রাস্তা পৌঁছয় সিকিম। সেই পথ ডুয়ার্স, গরুবাথান, লাভা, কালিম্পং হয়ে চলে যায় সিকিম। সেই রাস্তার অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। বিপদসঙ্কুল ওই পথ ব্যবহার করতেও মানা করছেন স্থানীয়রা। জানা যায়নি, সেই পথ আদৌ অটুট রয়েছে কি না। বাংলার পর্যটন সংস্থাগুলির সমিতি দুই রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে। কী করে পর্যটকদের উদ্ধার করে সমতলে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকারও।
রাজ্য ইকো টুরিজ়ম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘পর্যটকদের সঠিক সংখ্যা হিসাব করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বহু পর্যটকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আশা করছি, সন্ধ্যার মধ্যে কত পর্যটক সিকিমে আটকে রয়েছেন, তা হিসাব করে ফেলতে পারব। আমাদের আবেদন, এখনই কেউ রাস্তায় নামার চেষ্টা করবেন না। যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন।’’
এই প্রেক্ষিতে ইতিউতি প্রশ্ন উঠছে, তিস্তার এই ধ্বংসলীলার কারণ কী? পরিবেশবিদদের একটি অংশের অবশ্য দাবি, উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে সিকিম পাহাড়েও। অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন এবং নদীর উপর ড্যাম (বাঁধ) তৈরির ফল ভুগতে হচ্ছে। বস্তুত, দেখা গিয়েছে, তিস্তার উপর তৈরি ড্যাম মুহূর্তে চুরমার করে ফেলেছে নদী। পরিবেশবিদেরা সতর্ক করছেন, এখনই সতর্ক না হলে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy