Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নষ্ট হচ্ছে গুরুঙ্গের উদ্যোগে তৈরি মূর্তি

গুরুঙ্গ ফের স্বমহিমায় না ফিরলে তাঁর সাধের বাঘ-ভালুকের কী হবে তা নিয়ে রোজই বাড়ছিল জল্পনা। কিন্তু, বিরোধ তো গুরুঙ্গের সঙ্গে। তাঁর সাধের হাতি-বাঘ-ভালুক-গণ্ডারদের দোষ কি!

পলিথিনের চাদরে বন্দি হয়ে পড়ে বুনোদের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

পলিথিনের চাদরে বন্দি হয়ে পড়ে বুনোদের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

হাতি-গন্ডার, বাঘ-ভালুক দার্জিলিং পাহাড়ের পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রস্তুত। জিরাফ-শিম্পাঞ্জিও পাহাড়ি জনপদের নানা পার্কে যাওয়ার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু, যাঁর উদ্যোগে বুনোরা তৈরি হয়েছে, সেই বিমল গুরুঙ্গই লোকালয় ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন পাহাড়ি জঙ্গলে। ফলে, বুনো জন্তুদের প্রমাণ আকারের ২০টি মূর্তির কী হবে তা নিয়ে এখন সরগরম দার্জিলিঙের জামুনির বিস্তীর্ণ এলাকা। কারণ, দীর্ঘ দিন পলিথিনে ঢেকে রাখলে ধীরে ধীরে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দ্রুত বুনোদের মূর্তিগুলি নানা পার্কে বসানোর জন্য গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) কেয়ারটেকার বোর্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

জিটিএ সূত্রের খবর, বিষয়টি নজরে আসামাত্র জিটিএ-এর কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। জিটিএ-এর পর্যটন বিভাগের অফিসারদের ডেকে বিনয় জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের নানা পার্কে এলাকার বাসিন্দা ও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে জিটিএ-এর আগের বোর্ড যে কাজ হাতে নিয়েছিল তা সম্পূর্ণ করা হবে। সেই মতো ওই মূর্তি গুলি শিলিগুড়ির যে মৃৎশিল্পী তৈরি করেছেন, সেই ভোলা পালকেও ডেকেছে জিটিএ।

জিটিএ-এর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘শ্রাবেরি নাইটেঙ্গল পার্কে কয়েকটি বুনো জন্তুর মূর্তি আগেই বসানো হয়েছে। আরও কয়েকটি পার্কে বসানো হবে। আর পাঁচটা ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলেও উন্নয়ন প্রকল্পে তার প্রভাব পড়বে না।’’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে রাজ্যের কাছ থেকে যে টাকা মিলেছে তার ৫০ কোটি টাকা পর্যটন প্রসারে বরাদ্দ করেছে জিটিএ। সেখান থেকেই পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্র, পার্কগুলোয় ওই মূর্তি বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

জিটিএ সূত্রের খবর, বছর দুয়েক আগে শিলিগুড়িতে গিয়ে গুরুঙ্গ মৃৎশিল্পী ভোলাকে ডেকে ৩০টি মূর্তি তৈরির নির্দেশ দেন। গুরুঙ্গ তাঁকে বলেছিলেন, প্রমাণ আকারের পাহাড়ি ভালুক, হাতি-গণ্ডার, শিম্পাঞ্জি, জিরাফ, চিতাবাঘের মূর্তি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জ্যান্ত মনে হয়। তা হলে বেড়াতে গিয়ে সকলে ওই মূর্তির ছবি তুলতে পারবে। সেই মত সামগ্রী নিয়ে জামুনিতে হাজির হন মৃৎশিল্পী। নিয়মিত সেই কাজের তদারকি করতেন খোদ গুরুঙ্গই। চিতাবাঘ, ভালুকের মুখটা জীবন্ত না হওয়ায় তা নতুন করে তৈরিও করান তিনি। প্রথম দফায় তৈরি ১০টি মূর্তি শ্রাবেরি পার্ক ও কয়েকটি জায়গায় বসানো হয়। দ্বিতীয় দফায় তা গ্রীষ্মের মরসুমে বসানোর কথা ছিল। তার আগেই জুন মাস থেকে পাহাড়ে শুরু হয় আন্দোলন। গুরুঙ্গ ফেরার হতেই তাঁর সাধের মূর্তি পলিথিনে চাপা দিয়ে সমতলে ফিরতে হয় মৃৎশিল্পী ও তাঁর কর্মীদের। সেই থেকেই তৈরি হয়ে থাকা বাঘ-ভালুক-গন্ডার-জিরাফ-শিম্পাঞ্জি চলে গিয়েছে পলিথিনের মোড়কে।

গুরুঙ্গ ফের স্বমহিমায় না ফিরলে তাঁর সাধের বাঘ-ভালুকের কী হবে তা নিয়ে রোজই বাড়ছিল জল্পনা। কিন্তু, বিরোধ তো গুরুঙ্গের সঙ্গে। তাঁর সাধের হাতি-বাঘ-ভালুক-গণ্ডারদের দোষ কি! জিটিএ সূত্র বলছে, বৈঠকে নাকি এমন যুক্তি দিয়েছেন খোদ বিনয়।

অতএব আজ কিংবা কাল, শিম্পাঞ্জি-বাঘ-ভালুকের মুক্তি হচ্ছেই, এমন ভেবেই স্বস্তিতে ভোলা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bimal Gurung Sculpture শিলিগুড়ি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE