Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মহালয়া আনল বিসর্জন সংবাদ

তিন মাস ধরে ছেলের মাইনে হচ্ছিল না। হাতে টাকা নেই, কী ভাবে কাজ করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না শিবু-সুমতি। তার পরে মহালয়ার দোরগোড়ায় জলপাইগুড়ির পাঙ্গার ছাদপাড়ার বাড়িতে এল সেই খবর— তালা পড়ল শহরের নামী বিপনিতে।

হতাশ: দুয়ারে দাঁড়িয়ে সুমতি রায়। নিজস্ব চিত্র

হতাশ: দুয়ারে দাঁড়িয়ে সুমতি রায়। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

মাটি থেকে অর্ধেক উঠে থমকে গিয়েছে দেওয়াল। গত তিন মাসে তার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে রোদ-জল। ইটের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। যেন বেরং হয়ে যাচ্ছে কোনও রঙিন স্বপ্ন। দেখছেন শিবু আর সুমতি। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন ছেলের কথা ভেবে।

তিন মাস ধরে ছেলের মাইনে হচ্ছিল না। হাতে টাকা নেই, কী ভাবে কাজ করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না শিবু-সুমতি। তার পরে মহালয়ার দোরগোড়ায় জলপাইগুড়ির পাঙ্গার ছাদপাড়ার বাড়িতে এল সেই খবর— তালা পড়ল শহরের নামী বিপনিতে। ছেলে দীপঙ্কর সেখানেই কাজ করতেন। বাড়ি ফিরে সে দিন তিনি কোনও কথা না বলে শুয়ে পড়েছিলেন। বাড়ির পাশের মাঠে তখন কাশফুল। পাড়ায় পুজোর মিটিং। সেই পুজোয় জলসারও প্রস্তুতি। কিন্তু ছাদপাড়ার রায়বাড়িতে শরৎকাল যেন মুছে গিয়েছে।

মাটির দাওয়ায় বসে সুমতি বলছিলেন, “ছেলের চাকরি নেই, এই কথা শোনার পর থেকে পুজো ভাবটাই হারিয়ে গিয়েছে। কাশফুল চোখে পড়ছে না। পুজোর পরে সংসার চলবে কী করে, সেটাই মাথায় আসছে না।’’

জলপাইগুড়ির কদমতলা মোড়ে যে তিন তলা মলটি কয়েক দিন আগে বন্ধ হয়ে গেল ক্রেতার অভাবে, সেখানে নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করতেন দীপঙ্কর। বাবা-মা দু’জনে কাজ করেন একটি চা বাগানে। তিন জন মিলিয়ে চলে যেত সংসার। বাগানে আয় কম, তাই কোনও নাগরিক কাজে রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন রায় দম্পতির একমাত্র ছেলে।

শিবু বলছেন, ‘‘ছেলে খুব বেশি রোজগার করত না। তবে কিছু তো পেত। একটা ভরসা তো ছিল।’’ বলছেন, ‘‘এখন কোথায় যে চাকরি পাবে, ভগবান জানেন।’’

মাধ্যমিক পাশ দীপঙ্করের সামনে খুব বেশি সুযোগও নেই। বয়স তেইশ বছর। স্বাস্থ্য ভাল। তাই নিরাপত্তা কর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। এখন সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কয়েকটি সংস্থায় চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও মেলেনি কোনও আশ্বাস। দীপঙ্করের কথায়, “তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শুনছিলাম বোনাস দেবে। হঠাৎ এক দিন জানাল, কালকে থেকে কাজ নেই।” শপিং মলটির কর্তৃপক্ষ জানালেন, তাঁরা নিরুপায়। তাঁদের কথায়, বিক্রি কমে যাওয়াতেই ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ছোটবেলায় পাড়ার পুজোর চাঁদা কাটতে যেতেন দীপঙ্কর। ইদানীং সময় হত না। তাঁর কথায়, “এত দিন আলো ঝলমলে বাতানুকূল শপিং মলে সকাল থেকে রাত কাটত। একটু একটু করে মনে হচ্ছিল, এত দিনের কষ্ট, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এখন অন্ধকার ছাড়া কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।”

পাশেই পাড়ার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। চারদিকে আলো জ্বলে উঠছে। ঢাকে বোল উঠবে ষষ্ঠী থেকে। তাঁদের উঠোনের একদিকে আলো লাগানো হচ্ছে। অন্য দিকে থাকা বাড়িটা এখন অন্ধকারে। আলোর দিকে তাকিয়ে রায় দম্পতির মনে হচ্ছে, এই পুজোয় আর ছেলেটাকে নতুন জামা কিনে দেওয়া হল না। ছেলেও ভাবছে বাবা-মায়ের কথা।

তিস্তার উপর থেকে মৃদু বাতাসে কাঁপছে কাশের বন। সেতু দিয়ে দুর্গার সংসারকে নিয়ে যাচ্ছে কোনও লরি। এই সব দৃশ্য সরে গেলে রায়বাড়িতে শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Durga Puja 2019 Sacked
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy