ম্যাস্টিকের রাস্তা করে শহরের উন্নয়নের প্রচার করা হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে যাতে নষ্ট না করা হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নিদের্শ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। ওই রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করা যাবে না দোহাই দিয়েই তাই গত কয়েক মাস ধরে পুর কর্তৃপক্ষ বহু বাসিন্দাকে বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ ব্যবস্থা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ ফোর জি পরিষেবার কেবল পাততে পুর এলাকার বহু জায়গায় ম্যাস্টিকের রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে বা মাটির ভিতর দিয়ে কেবল নিতে গিয়ে রাস্তা ফেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
এ দিকে পানীয় জলের পরিষেবা পেতে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অনেকে আবেদন করেও সংযোগ না মেলায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। আবেদন করেও ওই কারণের জন্য অন্তত ৪০ জনকে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া যায়নি বলে পুরসভারই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। সে কারণে বিশেষ করে গরমের মুখে পানীয় জলের জন্য তাঁদের ফের দুভোর্গ পোহাতে হবে বলে বাসিন্দাদের অনেকেই আক্ষেপ করেছেন। ভোটের মুখে পানীয় জলের ওই সমস্যা নিয়ে সরব বিরোধীরাও।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উদ্যোগে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ম্যাস্টিক করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ সেই কাজ করেছে। সে কারণে পানীয় জলের সংযোগ দিতে বা পানীয় জলের পাইপ লাইন মেরামতির জন্য রাস্তা ম্যাস্টিকের রাস্তা খোঁড়ার অনুমোদন পেতে তাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং এসজেডিএ’র দ্বারস্থ হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, ‘‘পাইপলাইন অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তার এক ধার দিয়ে পাতা বলেই অন্য দিকের বাসিন্দাদের সংযোগ দিতে রাস্তা খোঁড়ার প্রয়োজন হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে পুর আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনা করতে দফতরের বাস্তুকারদের বলা হয়েছে।বাসিন্দাদের তাতে কোনও সমস্যা না হয় তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ফোর জি কেবল পাতার কাজ যারা করছেন তাদেরকেও ইচ্ছে মতো রাস্তা খুঁড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তারা কোন জাযগায় কেবল পাতবেন আগাম পরিকল্পনা দেবেন। সেই মতো কাজের পর রাস্তা ফের সংস্কার করে দেওয়া হবে।
সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুর কর্তৃপক্ষও। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়নদফতর এবং এসজেডিএ কতৃর্পক্ষের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। যে সমস্ত জায়গায় পানীয় জলের সংযোগের জন্য খুঁড়তে হবে সেখান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর বা এসজেডিএ’র বাস্তুকারদের নিয়ে যৌথ ভাবে থেকে কাজ করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। কাজের পর রাস্তা সংস্কার করা হবে।’’ এ দিন এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গেও কথা বলেছে পুর কতৃর্পক্ষ। তবে ফোর জি কেবল পাতার জন্য রাস্তা খোঁড়ার ব্যাপারে ওই পুর আধিকারিক জানান, তাঁরা আগে থেকে কেবল পাতার জন্য টাকা দিয়ে চুক্তি করেছে। তবে খোঁড়া রাস্তা তাঁরাই ঠিক করে দেবেন বলে চুক্তি রয়েছে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। ফোর জি কেবল পাতার জন্য প্রধাননগরের নিবেদিতা রোড, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মনসা মন্দির রোড, বিবাদি কলোনি, শিলিগুড়ি পুরসভার সভার সামনে এমন অনেক জায়গাতেই কেবল পাতার জন্য ম্যাস্টিকের রাস্তা খোঁড়া হয়েছে বা ফেটে গিয়েছে। অথচ রাস্তা খোঁড়া যাবে না কারণ দেখিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন যাতায়াতের রাস্তায় এনটিএস মোড় লাগোয়া এলাকায়, ঘোঘোমালি মেন রোডের ধারে, রাজা রামহোমন রায় রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের পানীয় জলের সংয়োগ মেলেনি। ঘোঘোমালি মেন রোডের বাসিন্দা ঊষারঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘‘শহরে কেবল পাতার জন্য ম্যাস্টিকের রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। অথচ পানীয় জলের সংযোগ পেতে বাসিন্দাদের হেনস্থা হতে হবে কেন তা পরিষ্কার বুঝতে পারছি না। পুর কমিশনারকে এ ব্যাপারে বহুবার বলেছি।’’ একই অভিযোগ এনটিএস মোড় এলাকার বাসিন্দা সুনীতি কুমারীর। তিনি জানান, দেড় মাস আগে আবেদন করেছেন। অথচ ম্যাস্টিকের রাস্তা খোঁড়া যাবে না বলে পানীয় জলের সংযোগ দিতে চাইছে না পুর কর্তৃপক্ষ।
বিরোধী বামেদের তরফে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেবল পাতার জন্য রাস্তা খোঁড়া হবে। আর জলের জন্য বাসিন্দাদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে তা হয় না। নাগরিকদের পরিষেবা দেওয়াটাই বড়।’’ কংগ্রেস, বিজেপি’র তরফেও সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারের অভিযোগ, পুরসভা জবর দখল করে আট মাস ধরে নির্বাচন না করিয়ে নাগরিক পরিষেবা থেকে বাসিন্দাদের কারা বঞ্চিত করেছেন তা সকলেই জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ফোর জি কেবল পাতা নিয়ে আমরাও অভিযোগ তুলেছিলাম। সেই রহস্য এখনও পরিষ্কার হয়নি। তা ছাড়া রাস্তার জন্য জলের সংযোগ মিলবে না এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy