Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বাধা পেয়ে সাপটানা এখন যেন নর্দমা

সাপের মতো একেবেঁকে বয়ে গিয়েছে বলে তার নাম সাপটানা। বেশ কয়েক বছর আগে, শীতকালেও সাপটানায় হাঁটুজল দেখেছে ফালাকাটাবাসী। এখন ভরা বর্ষাতেও নদী খাতে গড়াচ্ছে শীর্ণ জলধারা। নদীখাত দখল করে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক নির্মাণ। তার জেরেই জল বাধা পেয়ে ফিরে গিয়েছে। ভরা বর্ষাতেও তাই জল নেই সাপটানায়। আবার যখন মুজনাই নদী উপচে ক্রমাগত জল ঢুকে পড়ে সাপটানায়, তখন নদী উপচে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে শহরে।

এটাই নদীর বর্তমান চেহারা (বাঁ দিকে)। নদীতে জমে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। নিজস্ব চিত্র।

এটাই নদীর বর্তমান চেহারা (বাঁ দিকে)। নদীতে জমে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। নিজস্ব চিত্র।

রাজকুমার মোদক
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

সাপের মতো একেবেঁকে বয়ে গিয়েছে বলে তার নাম সাপটানা। বেশ কয়েক বছর আগে, শীতকালেও সাপটানায় হাঁটুজল দেখেছে ফালাকাটাবাসী। এখন ভরা বর্ষাতেও নদী খাতে গড়াচ্ছে শীর্ণ জলধারা। নদীখাত দখল করে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক নির্মাণ। তার জেরেই জল বাধা পেয়ে ফিরে গিয়েছে। ভরা বর্ষাতেও তাই জল নেই সাপটানায়। আবার যখন মুজনাই নদী উপচে ক্রমাগত জল ঢুকে পড়ে সাপটানায়, তখন নদী উপচে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে শহরে।

ফালাকাটা শহরের দু’দিক দিয়ে দু’ভাগে বয়েছে সাপটানা নদী। শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নানা বাঁকে ঘুরে নদী বয়ে গিয়েছে। ফালাকাটা শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের দোলং নদী থেকে সাপটানার উৎপত্তি। এর পরে গোপনগর, এনবিএসটিসি ডিপো, হাসপাতাল পাড়া, থানা রোড, নেতাজি রোড, জঙ্গলি কালীবাড়ি, মাদারি রোড, বিডিও অফিস পাড়া ছুঁয়ে এঁকে বেঁকে প্রায় তিন কিলোমিটার গড়িয়ে মুজনাইতে মিশেছে এই নদী। এর আরেকটি শাখাও রয়েছে। সেটিও সাপটানা নামেই পরিচিত। শাখা নদীটি মাদারি রোড, বিডিও অফিস পাড়া ও বাবুপাড়ার পাশ দিয়ে মরা মুজনাই নদীতে পড়েছে। এটি এখন নর্দমার আকার নিয়েছে। কোথাও পাঁচ ফুট তো কোথাও দশ ফুট চওড়া।

জনসংখ্যা বা দোকান-বাজার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে নদীর নাব্যতা, স্বাভাবিক গতিও। এক সময়ে চল্লিশ-পঞ্চাশ মিটার চওড়া ছিল সাপটানা। সেই নদী হারিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ দিন আগেই। নদী খাত দখল করে নির্মাণ, নদীর মধ্যে অবাধে জঞ্জাল ফেলা হয় বলে অভিযোগ। কোথাও বাধা পেয়ে, কোথাও দূষণের জেরে শুকিয়ে গিয়েছে নদী। ফলে, শহরে কোথাও আগুন লাগলে, সাপটানার জল না পেয়ে দমকলের ইঞ্জিনকে যেতে হয় শহর লাগোয়া মুজনাইতে।

শহরের মধ্যে থাকা এই নদী শুকিয়ে গেলেও, প্রশাসনিক কোনও উদ্যোগ নেই বলেই বাসিন্দাদের অভিযোগ। বছর তিনেক আগে ফালাকাটার তৎকালীন বিডিও সুশান্ত মণ্ডল সাপটানা নদী দু’টিকে বাঁচাতে ফালাকাটার সব রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সমিতি, বিশিষ্ট নাগরিক ও কয়েকটি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে নদী বাঁচাও কমিটি গড়েছিলেন। নদীখাত জবরদখল করে রাখা ব্যক্তিদের নোটিশও পাঠাও কমিটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপরে আর কোনও পদক্ষেপ হয়নি। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারীও। অনিলবাবু বলেন, “নদী শুকিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হল জবরদখল। সাপটানার সমস্যা নিয়ে ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতিতে আলোচনা হয়েছে। যারা নদীর কোন অংশ দখল করে আছে তাদের দ্রুত জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।’’ দখলমুক্ত করে নদীর দু পাড়ে সৌর্ন্দযায়নের পরিকল্পনাও নেওয়া হবে বলে অনিলবাবু দাবি করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফালাকাটার বাসিন্দা যোগেশ বর্মন বলেন, “সাপটানা নদী হল ফালাকাটার ফুসফুস। প্রশাসনের উচিত, দখল হয়ে যাওয়া নদীর পাড় কোন ব্যক্তিস্বাথের্র কথা চিন্তা না করে যেভাবেই হোক জবরদখল মুক্ত করা।’’

নদীর গতি ফিরিয়ে দিতে ফালাকাটার বর্তমান বিডিও কৃষ্ণকান্ত ঘোষ দ্রুত সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে, তারপরে সমাধান খোঁজা হবে। শুধু ব্লক প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়, বাসিন্দাদেরও সহযোগিতা চাই।’’

শহরের প্রবীণ বাসিন্দা সূনীল চক্রবর্তী, ব্যবসায়ী নির্মলেন্দু সাহা-রা তাঁদের ছোটবয়সে সাপটানায় নৌকা চলতেও দেখছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘কিছু দিন আগেও শীত কালে হাঁটুজল থাকত সাপটানা নদীতে। এখন বর্ষাতেও নদীতে জল নেই। শহরের স্বার্থেই প্রশাসন আমাদের ছেলেবেলার নদী ফিরিয়ে দিক।’’ ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নান্টু তরফদার বলেন, “বছর তিনেক আগে নদী বাঁচাও কমিটির সঙ্গে সাপটানা নদী খাতে সমীক্ষা চালিয়েছিলাম। নদী খাতেই বাড়ি-ঘর দেখেছি। কোনটা নদী, কোনটা বসতি কিছুই বোঝার উপায় নেই। প্রশাসন-বাসিন্দা সকলে উদ্যোগী না হলে নদী বাঁচানো যাবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE