Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪

সংঘাতের কারণ কি সাফল্যই

বনকর্তাদের কথায়, একটা সময় বনাঞ্চলের জমির উপরেই একের পর এক চা বাগান তৈরি করা হয়েছে৷ কাজের সূত্রেই সেই সব বাগান এলাকায় মানুষের বাসও শুরু হয়৷

তদন্তে কুকুর নিয়ে বন দফতর। —নিজস্ব চিত্র

তদন্তে কুকুর নিয়ে বন দফতর। —নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

‘প্রবলেম অফ সাকসেস’—অর্থাৎ সাফল্যের সমস্যা৷

দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে এই কথাটাই বলছিলেন জলদাপাড়ার শীর্ষ এক বন কর্তা৷ মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এই জাতীয় উদ্যান লাগোয়া দু’টি চা বাগানে চিতাবাঘের হানায় এক শিশু ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে৷ আর একটি বাগানে মানুষের হাতে দু’টি চিতাবাঘকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ৷ মানুষ যে আক্রোশের বশেই চিতাবাঘকে আক্রমণ করছে, সে ব্যাপারে বনকর্তারা নিশ্চিত৷ কিন্তু আচমকা চিতাবাঘের এমন আচরণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণেই বন কর্তাদের কেউ কেউ ‘সাফল্য’কেই সমস্যার অন্যতম কারণ বলে মনে করতে শুরু করেছেন৷

কেমন সেই সাফল্য, যার জেরে এতো সমস্যা?

বনকর্তাদের কথায়, একটা সময় বনাঞ্চলের জমির উপরেই একের পর এক চা বাগান তৈরি করা হয়েছে৷ কাজের সূত্রেই সেই সব বাগান এলাকায় মানুষের বাসও শুরু হয়৷ ফলে বন্যপ্রাণের সঙ্গে মানুষের সংঘাতের বীজটাও তখনই বপন হয়ে যায়৷ জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমলের কথায়, “তারপরও জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের শুধু সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, বছরের পর বছর ধরে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও যথেষ্টই সফল বন দফতর৷ অন্যদিকে, বন লাগায়ো এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরও সংখ্যাও দিনকে দিন বেড়েই চলছে৷ ফলে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দুদিকেই এই সংখ্যাবৃদ্ধি সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে৷”

তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশের পরিবর্তন৷ যার জন্য এই চা বাগান বন্ধ থাকাকেই দায়ি করছেন বনকর্তাদের অনেকে৷ তাঁদের কথায়, প্রজননের জন্য মা চিতাবাঘের এমনিতেই এই সময় বিভিন্ন চা বাগানের নালাকে বেছে নেন৷ কিন্তু তাঁদের দাবি, ওই এলাকায় একাধিক চা বাগান দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল৷ ফলে বাগানগুলির বড় অংশ ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়৷ যেখানে নিরাপদ আস্তানা গড়ে তোলে চিতাবাঘ৷

এক বনকর্তার কথায়, কাছাকাছি একাধিক শ্রমিক মহল্লা থাকায় সেখানে ছাগল থেকে শুরু করে প্রচুর হাঁস-মুরগি রয়েছে৷ যা চিতাবাঘের খাদ্যের সংস্থানের পক্ষেও যথেষ্ট উপযোগী পরিবেশ৷ জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমলের কথায়, “এই পরিবেশটার সঙ্গে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছিল চিতাবাঘেরা৷ কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, ফের বন্ধ বাগান খুলেছে৷ ফলে সেখানে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে৷ ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সংঘাতের আশঙ্কাও বেড়েছে৷”

বন দফতরের কর্তাদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, বন্ধ বাগান খোলার পর স্বাভাবিক ভাবে ঝোপঝাড় কিছুটা হলেও কমবেই৷ সেক্ষেত্রে চিতার আস্তানাও খানিকটা কমেছে৷ এক্ষেত্রে চিতাবাঘ আশ্রয় ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য এমনটা করছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাদেরই একাংশ৷ ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেশ বসু বলেন, “চিতাবাঘ সাধারণত মানুষকে এ ভাবে আক্রমণ করে না৷ এক্ষেত্রে কোনও কারণে নিরাপত্তার অভাবের জন্যই বারবার তারা মানুষকে আক্রমণ করে থাকতে পারে৷ এমনও হতে পারে প্রসবের পর সন্তানদের জন্য মা চিতাবাঘগুলি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে৷”

তবে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য বন্ধ বাগানের ঝোপঝাড়কেই দায়ি করছেন৷ তাঁর সাফ কথা, “দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার জন্য ঝোপঝাড়ে ভরে থাকা বাগানগুলিতে চিতার আস্তানা বেড়েছে৷ তাই এই ঘটনা বারবার করে ঘটছে৷ বিষয়টি উদ্বেগের৷”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Investgation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE