স্বতঃস্ফূর্ত: কোথাও কোনও পোস্টার নেই, কোনও রাজনৈতিক দলও ডাক দেয়নি, শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার এই ডাকেই এ দিন এই বিশাল মিছিল দেখল শিলিগুড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
‘বাংলা ভাগ রুখতে চাইলে চলে এসো, রবিবার বিজেপি-তে (বাঘাযতীন পার্কে)’— এমনই একটা ‘মেসেজ’ ঘুরছিল ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে। ছড়াচ্ছিল মুখে মুখেও। কোথাও কোনও পোস্টার পড়েনি, দেওয়াল লিখনও নয়। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার এই ডাকেই এ দিন বিশাল মিছিল দেখল শিলিগুড়ি।
‘‘ঠিক এমনটাই হয়েছিল মিশরের তেহরির স্কোয়্যারে,’’ মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন এক জন। মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, এ ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার মানুষকে একজোট করেছিল বাংলাদেশের শাহবাগ স্কোয়্যারও। মোমবাতি মিছিল হয়েছিল জেসিকা লাল হত্যা মামলার রায়ের প্রতিবাদে।
এই ভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখনও বৃষ্টি নামল, কখনও মেঘ সরে চড়া রোদ উঠল। সে সব ঠেলেই মিছিল এগিয়েছে। আর যত এগিয়েছে, ততই লোক বেড়েছে। মোটরবাইকে, অটোয়, হেঁটে, এমনকী গাড়ি ভাড়া করে লোক এসেছে মিছিলে। কত ভিড় হয়েছিল? পুলিশের হিসেব বলছে দশ হাজার। কিন্তু উদ্যোক্তাদের দাবি, কম করেও ১৫ হাজার মানুষ হেঁটেছেন এই মিছিলে। সে দাবি যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, তা মিছিলের বহরই জানিয়েছে। মিছিলের মুখ যখন সেবক মোড়ে, তখনও প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে বাঘাযতীন পার্ক থেকে লোক এগোচ্ছেন।
বাগডোগরা থেকে এসেছিলেন কয়েক জন শিক্ষক। তাঁদেরই এক জন বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘কে মিছিলের ডাক দিয়েছে জানি না। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় চলে এসেছি।’’ মিছিলের মাঝামাঝি ছিলেন মধ্যবয়সী হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক রণজিৎ বিশ্বাস। আবার ছিলেন তরুণরাও। স্লোগান উঠেছে রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের নামে। হাততালি দিতে দিতে সুর-তাল রেখে সকলে বলেছেন, ‘বাংলা ভাগ রুখতে, আমরা হাঁটব একসাথে।’ শোনা গিয়েছে, ‘বিমল গুরুঙ্গ গো ব্যাক’। ভিড় সামলাতে নাকাল হতে হয়েছে পুলিশকেও।
কাদের ডাকে এই মিছিল? জানা গিয়েছে শহরের কয়েক জন যুবক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রথম মিছিলের ডাক দেন। তবে এত সাড়া মিলবে, তাঁরাও ভাবেননি। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এই ভিড় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল। আবারও মিছিল হবে।’’ মিলনপল্লি থেকে এসেছে মহিলাদের একটি দল। তাঁদের হয়ে চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করিনি বলেই এত দিনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বার রুখে দাঁড়াতে হবে।’’
মহানন্দা সেতু পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল প্রথমে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দার্জিলিং মোড়ের দিকে এগোতে চায় মিছিল। পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়ায়। তার পরে ধাকাধাক্কি, পুলিশের দিকে জলের বোতল, ঢিলও উড়ে আসে বলে অভিযোগ। বেশ কিছুক্ষণ এমন চলার পরে বৃষ্টি নামায় বিক্ষোভকারীরা পিছু হঠলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পুলিশের একাংশ বলছে, কোনও নেতৃত্ব ছাড়া এমন মিছিল, যেখানে প্রচুর তরুণ-তরুণী রয়েছেন, তার থেকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। এ দিন অবশ্য বড় কিছু হয়নি। ধাক্কাধাক্কি ছাড়া দু’টিতে গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের পাল্টা দাবি, মিছিলের মাঝে অশান্তি তৈরি করে লক্ষ্যকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ সচেতন থাকায় তা করা সম্ভব হয়নি।
মিছিল চলাকালীনই ছবি, স্টেটাস আপডেট হতে থাকে। বাড়তে থাকে ‘লাইকে’র সংখ্যা। সব কিছুর সঙ্গে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনটি শব্দ— ‘দেখিয়ে দিল শিলিগুড়ি’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy