Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আতঙ্ক ছড়াতেই হামলা রায়গঞ্জে, সন্দেহ

সোমবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যখন টিএমসিপি ও ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বর্ষের স্নাতক স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের অনার্সের ক্লাস চলছিল।

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের পরে জাতীয় সড়ক অবরোধে কংগ্রেস। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের পরে জাতীয় সড়ক অবরোধে কংগ্রেস। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

সোমবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যখন টিএমসিপি ও ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বর্ষের স্নাতক স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের অনার্সের ক্লাস চলছিল। বিভিন্ন ক্লাসরুমে প্রায় ৫০০ পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ছিলেন। গোলমালের জেরে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ক্লাসরুমের মধ্যেই আতঙ্কে বসে থাকেন। বিকাল ৪টা নাগাদ পুলিশের সাহযোগিতায় পড়ুয়াদের বাইরে বার করে দেন শিক্ষকেরা।

এই ঘটনার পর অভিযুক্ত টিএমসিপি সমর্থকদের গ্রেফতার ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কংগ্রেসের শতাধিক কর্মী সমর্থক বিকাল ৪টা থেকে প্রায় দুঘন্টা রায়গঞ্জের শিলিগুড়িমোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ উঠলেও পরে কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা শিলিগুড়িমোড় থেকে কলেজপাড়া পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়ন্দিতা দাস বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা এদিন ক্লাস করছিলেন। সেই সময় কিছু যুবককে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লাঠিসোটা নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখে ভয় পেয়ে যান। পরে পড়ুয়ারা গুলির শব্দ পান।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘দোতলার একটি ক্লাসরুমে পড়ুয়াদের পড়াচ্ছিলাম। হঠাৎই দেখি একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে ছোটাছুটি করছে। তারপরেই দু’দল যুবকের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সেই সময় পরপর কয়েকটি গুলির শব্দ পাই। পড়ুয়াদের নিয়ে আতঙ্কে দীর্ঘক্ষণ ক্লাসরুমে বসে থাকতে বাধ্য হই।’’


আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ছেন পড়ুয়ারা।

রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রতিটি কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করেছে। কিন্তু ছাত্র পরিষদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারেনি। তাই নির্বাচনের আগে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্ব কায়েম করতে এদিন টিএমসিপি সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ আক্রান্তদের।

জেলা কংগ্রেসের দুই সাধারণ সম্পাদক তথা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই ছাত্র পরিষদ নেতা পবিত্র চন্দ ও সন্দীপ বিশ্বাসের দাবি, ১৯৯২ সাল বাদে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ছাত্র পরিষদ তত্কালীন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ ও বর্তমান রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন ও ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ছাত্র পরিষদ সারা বছর পড়ুয়াদের পাশে থাকে বলেই ওখানে টিএমসিপি সংগঠন তৈরি করতে পারেনি। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার সাতটি কলেজে সন্ত্রাস চালিয়ে বিরোধী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কাছ থেকে নিজেদের দখলে নিয়েছে টিএমসিপি। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়টি যাতে টিএমসিপি সহজে দখল করতে পারে, তার জন্য পরিকাঠামো তৈরি না করেই তড়িঘড়ি রাজ্য সরকার কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করল। তাঁরা বলেন, ‘‘কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও টিএমসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্ব কায়েম করতে না পেরে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানোর পর তাঁদের গুলি করে খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। আসলে আতঙ্ক ছড়িয়ে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের ভয় দেখিয়ে ওরা বিশ্ববিদ্যালয় দখলের ছক করেছে। ছাত্র পরিষদ পিছু হটবে না। কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের পাশে রয়েছে।’’

রাজ্যে পালাবদলের পর এআইএসএফ, এসএফআই ও ছাত্র পরিষদের কাছ থেকে ইটাহার, রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ, ডালখোলা, কালিয়াগঞ্জ, ইসলামপুর, আইটিআই কলেজের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় টিএমসিপি। কিছু দিন আগে চোপড়াতে চালু হওয়া একটি কলেজেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। কিন্ত রাজ্যে পালাবদলের চার বছর পরেও রায়গঞ্জ টিএমসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখল করতে না পারায় গত ছ’মাস ধরে মরিয়া হয়ে ওঠে টিএমসিপি।

যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘টিএমসিপি জেলার কোনও কলেজেই গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেনি। সাধারণ পড়ুয়াদের সমর্থন আর বিরোধী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা টিএমসিপিতে যোগদান করায় নির্বাচনের মাধ্যমে অতি সহজেই ওই সাফল্য এসেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কংগ্রেস নেতাদের মদতে গত কয়েক দশক ধরে গুন্ডাগিরি করে ছাত্র পরিষদ ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ছাত্র পরিষদের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়মিত মারধর, সাইকেল ভাঙচুর ও শাসানির জেরে গত চার বছরেও পড়ুয়ারা আতঙ্কে সেখানে সংগঠনই তৈরি করতে পারেননি।’’ অমলবাবুর দাবি, ‘‘এদিন টিএমসিপি সমর্থকেরা পথ দুর্ঘটনায় মৃত এক টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রের শোকসভা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তখনই ছাত্র পরিষদ লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর হামলা চালায়।’’

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE