Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মেঘলা চিতাবাঘের চামড়াই ন’লাখি জ্যাকেট

একটি জ্যাকেটের এত দাম? সিকিমের দুই বাসিন্দা দাবি করেন, কয়েকদিন আগে সিকিমের জঙ্গলে মারা হয়েছিল একটি পূর্ণ বয়স্ক ক্লাউডেড বা মেঘলা চিতাবাঘকে।

চিতাবাঘ: ক্লাউডেড লেপার্ডের চামড়া উদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

চিতাবাঘ: ক্লাউডেড লেপার্ডের চামড়া উদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

টাকা তৈরি রাখুন ‘জ্যাকেট’ নিয়ে আসছি।

জানিয়েছিল সিকিমের দুই বাসিন্দা। জ্যাকেটের দাম চেয়েছিল প্রায় ৯ লাখ টাকা। দরদাম করে সাড়ে ৭ লাখে রফা হয়।

একটি জ্যাকেটের এত দাম? সিকিমের দুই বাসিন্দা দাবি করেন, কয়েকদিন আগে সিকিমের জঙ্গলে মারা হয়েছিল একটি পূর্ণ বয়স্ক ক্লাউডেড বা মেঘলা চিতাবাঘকে। সেটির গা থেকে টেনে তোলা চামড়া। মেঘলা চিতাবাঘের চামড়া বোঝাতে ‘জ্যাকেট’ ছিল সাঙ্কেতিক শব্দ অর্থাৎ পাচারের কোড। বিক্রেতারা তখনও টের পাননি সামনে বসে যিনি দরদাম করেছেন তিনি আসলে বন দফতরের রেঞ্জার। একপ্রস্ত খাওয়াদাওয়ার পরে ক্রেতার ছদ্মবেশে থাকা রেঞ্জার দাবি করেন, ‘‘টাকা নিয়ে তার ম্যানেজার আসছেন।’’

কিছু ক্ষণের মধ্যেই বনকর্মীরা এসে পৌঁছন। বমাল গ্রেফতার হয় দু’জন। বন দফতরের দাবি, দু’জনেই বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারকারী আর্ন্তজাতিক চক্রের অন্যতম পাণ্ডা।

শনিবার রাতে মালবাজারের কাছ থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছেন বৈকুন্ঠপুরের বেলাকোবা রেঞ্জের বনকর্মীরা। রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত নিজেই পাচারকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দরদাম করতে গিয়েছিলেন। গত শুক্রবার শিলিগুড়ি লাগোয়া শালুগাড়া থেকে প্যাঙ্গোলিনের আঁশ সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছিল বন দফতরের বেলাকোবা রেঞ্জ। ধৃতদের থেকে জেরা করেই বনকর্মীরা জানতে পারেন সিকিমের বাসিন্দা দু’জন মেঘলা চিতাবাঘ তথা ক্লাউডেড লেপার্ডের চামড়া বিক্রি করতে উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে। কালীঝোরার কাছে একটি এলাকায় তারা অপেক্ষা করছে বলে জানতে পেরেই অভিযান চালায় বনকর্মীরা। বৈকুন্ঠপুরের ডিএফও উমারানি এন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্তদের জেরা করে আরও নানা তথ্য মিলবে। পাচার রুখতে অভিযান চলবে।’’

আন্তর্জাতিক বাজারে মেঘলা চিতাবাঘের চামড়ার দর বেশ চড়া। লুপ্তপ্রায় এই প্রাণী হত্যা বা দেহাংশ কেনা-বেচা রুখতে বন্যপ্রাণী আইনও যথেষ্ট কড়া। ধৃত দু’জনের নাম মহেশ রাজ এবং সুর্যকুমার রাই বলে জানানো হয়েছে। সতর্ক থাকতে এরা সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে। কোনও এজেন্টের সঙ্গে সহজে দরদামও করে না। প্রথম দিকে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে কথাবার্তা হয়। পরে এজেন্টের পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত হলে তবেই ফোনে কথা শুরু হয়।

এ ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের আঁশ পাচারকারীদের সঙ্গে সিকিমের দুই বাসিন্দার আগে থেকেই কথাবার্তা হয়েছিল। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন বনকর্মীরা। রেঞ্জার সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘প্যাঙ্গোলিনের আঁশ সমেত যারা ধরে পড়েছিল তাদের দিয়েই সিকিমের দুই বাসিন্দার কথা বলাই। এরপর সরাসরি ক্রেতা সেজে ওদের কাছে যাই।’’ বন দফতর জানিয়েছে চামড়াটি ভুটানে পাচারের কথা ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE