নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও গ্রেফতার করা যায়নি মূল অভিযুক্তকে। শুক্রবার ধূপগুড়ি থানার তরফে দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ধূপগুড়ি শহর লাগোয়া খলাইগ্রামের আমতলা এলাকায় এ দিন বেশ কয়েকবার মূল অভিযুক্ত শাহরুখ আলমকে দেখা গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
দু’দিন ধরে বানারহাট-ধূপগুড়ি থানায় গিয়ে ফিরে আসার পরে অবশেষে গত বুধবার ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ রুজু করতে পারেন নাবালিকার মা।
তাঁর নাবালিকা মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আট দিন ধরে বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পুলিশের একাংশ অভিযোগ ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রথম দিন থানায় গেলে অভিযোগ থেকে ধর্ষণের কথা বাদ দিতেও বলা হয় বলে নির্যাতিতার মায়ের দাবি। অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা দেখা গিয়েছে এ দিনও। তৃণমূলেরই একটি অংশ থেকে এ দিন দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্তের সঙ্গে নাবালিকার বিয়ে হয়েছিল। ওই দাবির সমর্থনে নাবালিকার মায়ের অঙ্গীকার পত্র এবং রেজিস্ট্রির আবেদন পত্রও দেখানো হয়েছে। স্থানীয় এক ইমামকে দিয়েও বিয়ের দাবি করিয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এই দাবি নিয়েও পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে।
কাদের উস্কানিতে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে হল, বিয়ের সময় কারা উপস্থিত ছিলেন, তার তালিকা চেয়েছে ধূপগুড়ি প্রতিবাদী মঞ্চ। সকলের বিরুদ্ধে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করার দাবিও উঠেছে। বিয়ের সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নাবালিকার বিয়ের তত্ত্ব খাড়া করে মামলাকে লঘু করার চেষ্টা করছে পুলিশের একাংশও। অভিযোগ পেয়ে কলকাতা থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা ধূপগুড়িতে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে। অভিযুক্তদের দ্রুত ধরা হবে বলেও পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযুক্তের গ্রামের চিত্র ভিন্ন। মূল অভিযুক্ত সহ তার চার আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। মূল অভিযুক্ত শাহরুখকে পুলিশ পলাতক বললেও, গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এ দিন সকালে শাহারুখ গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজনের কাছে গিয়ে তার সঙ্গে নাবালিকার বিয়ের কাগজ দেখিয়েছে। শাহরুখের যে আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও গ্রামে দেখা গিয়েছে। শুধু এ দিন পুলিশের ভ্যান গ্রামে চোখে পড়েনি বলে তাদের দাবি। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে এক-দু বার পুলিশ ভ্যান অভিযুক্তদের বাড়ি গিয়েছে মাত্র। অথচ দিন-রাতের বেশিরভাগ সময়েই অভিযুক্তরা বাড়িতে থেকেছেন, কেউ বা বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করেছেন বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এ দিন নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে জলপাইগুড়িতে। নির্যাতিতার পরিবারকে অভিযোগ চুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপও দেওয়া শুরু হয়েছে বলে দাবি। এ দিন নির্যাতিতার মা শুধু বলেছেন, ‘‘কেউ হুমকি দেয়নি। তবে যে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে তা আমরা মানি না। প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপরে প্রথম দিন থেকেই অত্যাচার শুরু হয়।’’
প্রতিবাদী মঞ্চের এক সদস্যের অভিযোগ, ‘‘অভিযোগকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে আরও মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া আইনের চোখে বড় অপরাধ। এ বার পুলিশকে এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখবে তো?’’ অভিযোগ পৌঁছেছে মানবাধিকার সংগঠন সেভ ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদের কাছে। সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যা শুনছি তা ভয়ঙ্কর। নাবালিকাকে বিয়ের টোপ দিয়ে ফুঁসলে ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েও পুলিশ মূল অভিযুক্তকে ধরেনি। আমরাও ধূপগুড়িতে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়াব।’’
ধূপগুড়িতে এর আগে বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
এর আগে দশম শ্রেণির ছাত্রী এক কিশোরীকে ভরা সালিশি সভায় অপমান করা হয়। তার পরের দিন তার বিবস্ত্র দেহ পাওয়া যায় রেললাইনের ধার থেকে। সেই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ প্রথম থেকেই উদাসীন ছিল। কিন্তু তার চেয়েও ব়ড় কথা, ওই ঘটনার প্রধান সাক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে পুলিশ ওই নির্যাতিতার বাবার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পেয়ে মামলা দায়ের করে। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। সেই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তবে পুলিশের তরফে বক্তব্য ছিল, যেমন অভিযোগ হয়েছে সেই মতোই মামলা দায়ের করা হয়। এবারও তাই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রেও পুলিশ গড়িমসি করায় তদন্ত নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy