Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিস্ফোরক কাণ্ড

মূল পান্ডার খোঁজ পেতে জেরা দাওয়াকে

দেওয়ালির রেশ কাটিয়ে ভাইফোঁটার দিন যখন গোটা শিলিগুড়ি উৎসবে ব্যস্ত, সেই সময় শহর লাগোয়া সুকনায় শতাধিক জিলেটিন স্টিক হাতবদল হয়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরক কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এমনটাই জানতে পেরেছেন।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

দেওয়ালির রেশ কাটিয়ে ভাইফোঁটার দিন যখন গোটা শিলিগুড়ি উৎসবে ব্যস্ত, সেই সময় শহর লাগোয়া সুকনায় শতাধিক জিলেটিন স্টিক হাতবদল হয়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরক কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এমনটাই জানতে পেরেছেন। শনিবার রাতে মাল্লাগুড়ি থেকে ধৃত তিন জনের অন্যতম দাওয়া শেরিং ভোটেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনই তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে।

পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জিলেটিন স্টিক হাতবদলের পিছনে নাম উঠে এসেছে, চক্রের অন্যতম পান্ডা নেপালের বাসিন্দা ফুফু’র। ভাইফোঁটার দিন সকালে মাল্লাগুড়ির বাড়ি থেকে একটি সিমেন্টের বস্তায় করে ২০০ জিলেটিন স্টিক নিয়ে দাওয়া বার হয়। রাস্তায় দেখা হওয়া কয়েকজনকে সে হোটেলের পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানায়। বাড়ি থেকে প্রায় দুশো মিটার হেঁটে দার্জিলিং মোড়ে পৌঁছানোর পর একটি টোটো করে দাওয়া সুকনার লাগোয়া একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে যায়। সেখানে টেলিফোনে ফুফুর সঙ্গে যোগাযোগের করে। মিনিট পনেরো পর ফুফু একটি ছোট গাড়ি নিয়ে সুকনা এলাকায় আসে। দাওয়ার বয়ান অনুসারে ফুফু একাই গাড়িতে ছিল। সিমেন্টের বস্তার প্রথম দফার জিলেটিন স্টিক তুলে দেওয়ার পর নগদ ৩৫ হাজার টাকা দাওয়াকে দিয়ে গাড়িধুরার দিকে চলে যায়।

দাওয়ার দাবি, এক দু’দিনের মধ্যে পরবর্তী দফায় বিস্ফোরক নেওয়ার পর প্রথমবারের জন্য আরও কিছুটা টাকা দেওয়ার কথা ফুফু জানিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর যোগাযোগ করেনি। বিচলিত হয়ে দাওয়া ঘটনায় ধৃত সঙ্গী কৃষ্ণপ্রসাদ অধিকারির মাধ্যমে অন্য ক্রেতার খোঁজ শুরু করে। সেখানেই তারা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জালে পড়ে যায়। তবে প্রথমবার ফুফু বিস্ফোরকগুলি কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, তা সে জানে না বলে অফিসারদের কাছেদাবি করেছে।

তদন্তকারী অফিসার ও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কৃষ্ণপ্রসাদ ও দাওয়া অক্টোবর মাসের মাঝে ৮ দিন বাড়িতে ছিল না। দাওয়ার স্ত্রী পূজা লিম্বু সেই সময় একাই ছিলেন। সম্ভবত সেই সময় শিলং লাগোয়া চেরাপুঞ্জির খনি এলাকা থেকে জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটরগুলি তারা সংগ্রহ করে। দু’জনের মোবাইলের রেকর্ড ঘেঁটে শিলিগুড়ি ও নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি নাম-ঠিকানা মিলেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। আরও কোথাও কোনও বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি তাও পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বুঝেছি, চক্রে অনেক লোকজন রয়েছে। নিষিদ্ধ কারবারও হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। সেগুলি সবই খতিয়েদেখা হচ্ছে।’’

গত শনিবার রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে মাল্লাগুড়ির ভাড়া বাড়ি থেকে ৬০৯টি জিলেটিন স্টিক, ২০০ ডিটোনেটর এবং ৬৩০ মিটার কর্ডেক্স তার উদ্ধার হয়। নেপালের বাসিন্দা দাওয়া, তার স্ত্রী পূজা এবং সঙ্গে কৃষ্ণপ্রসাদকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, পুলিশ কমিশনার, ডিসি (সদর) ইন্দ্র চক্রবর্তী ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদশুরু করেছেন।

তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, গত এক বছর ধরে বিভিন্ন নাম ও ধর্ম ব্যবহার করে দাওয়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ঘোরাফেরা করেছে। স্থানীয় লোকেদের ঘনিষ্ঠ হতে, শিলং এ খ্রিষ্টান, নেপালে বৌদ্ধ ও শিলিগুড়িতে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিত। কী কারণে সে পরিচয় বদল করতে তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে কার্শিয়াঙের দুধিয়ায় নদীর ধারে নির্জন এলাকায় ডিটোনেটর, জিলেটিন স্টিকগুলি নিষ্ক্রিয় করে সিআইডিরবম্ব স্কোয়াড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police cross-exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE