গত একমাস ধরে রায়গঞ্জের কুলিক নদীতে দূষণ বাড়তে থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রায়গঞ্জের বিভিন্ন পরিবেশ ও পশুপ্রেমী সংগঠন।
তাঁদের অভিযোগ, বন দফতর ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বাসিন্দাদের একাংশ প্রতিদিন নদীতে আবর্জনা ফেলছেন। পাশাপাশি, প্রতিদিন সকালে ভিনরাজ্যের একাধিক ট্রাকের চালক শহরের বিভিন্ন বাজারে মাছ সরবরাহ করার পর ট্রাকগুলিকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ওই নদীতে সাফাই করছেন। ফলে দিনে দিনে নদী দূষণ বেড়ে চলেছে। নির্বাচনের মুখে নদীদূষণকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা আঁচ করতে পেরে শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী জোটের নেতাদের চাপানউতোর চরমে উঠেছে।
উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণধীর কুমারের দাবি, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।
জেলার বিভাগীয় বনাধিকারিক দীপর্ণ দত্তের মতে, বাসিন্দাদের সচেতনতা ছাড়া কুলিক নদীতে দূষণ রোখা সম্ভব নয়। তাই সামাজিক সচেতনতা গড়তে পরিবেশ ও পশুপ্রেমী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘দফতরের তরফে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে নদী দূষণ রুখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’
কুলিক নদীর সংস্কারের দাবিতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে শহরের ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিদ্বজ্জনদের দিয়ে কুলিক বাঁচাও কমিটি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা রায়গঞ্জ পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ। প্রায় একমাস ধরে কমিটির তরফে শহরে পদযাত্রা, পথসভা করে নদী সংস্কারের দাবি তোলে। কমিটির তরফে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও নদী সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। কমিটির আহ্বায়ক পবিত্রবাবুর দাবি, অবিলম্বে প্রশাসন ও বন দফতর নদী সংস্কার ও দূষণ রুখতে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। তিনি জানান, পরিবেশের স্বার্থে নদী বাঁচানোর দাবিতে নির্বাচনের পর ফের কমিটির তরফে টানা আন্দোলন হবে।
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক দিলীপ দে সরকারের দাবি, প্রশাসন ও বনদফতরের নজরদারির অভাবের এভাবে কুলিক নদীতে দূষণ বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে মাছ জলজ প্রাণী ও শ্যাওলার অস্তিত্ব থাকবে না। ফলে পরিযায়ীরা খাবারের অভাবে পক্ষিনিবাস বিমুখ হবে।
রায়গঞ্জের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্য ও রায়গঞ্জ পিপল ফর অ্যানিম্যালের সম্পাদক অজয় সাহার অভিযোগ, প্রশাসন ও বন দফতরের নজরদারির অভাব ও গাফিলতির জেরে কুলিক নদীতে দূষণ বাড়ছে। তাঁদের দাবি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিযায়ীদের স্বার্থে সংগঠনের তরফে দীর্ঘদিন ধরে একাধিবার প্রশাসন ও বন দফতরের কাছে নদীটিকে বাঁচাতে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।
সিপিএমের রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির নেতা প্রাণেশ সরকার ও রায়গঞ্জ লোকসভা যুব কংগ্রেস কমিটির সহকারী সভাপতি তুষার গুহ বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের আমলে প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই কুলিক নদীতে দূষণ রুখতে কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, সিপিএম ও কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লোভে ঘোঁট করে নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে অপপ্রচার শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘‘দলের তরফে প্রশাসনের কাছে কুলিক নদীতে দূষণ রুখতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy