Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কুকুরের পাশেই রাতে শুয়ে রোগীর আত্মীয়রা

 ঘড়িতে রাত একটা৷ কনকনে ঠান্ডা৷ চার দিক ঢাকা কুয়াশায়৷ তার মধ্যেই খোলা আকাশের নীচে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে বেশ কয়েক জন৷ তাঁদের কেউ রয়েছেন বসে, কেউ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছেন৷

পাশাপাশি: হাসপাতাল চত্বরে কুকুরের পাশেই শয্যা রোগীর আত্মীয়র। নিজস্ব চিত্র

পাশাপাশি: হাসপাতাল চত্বরে কুকুরের পাশেই শয্যা রোগীর আত্মীয়র। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

ঘড়িতে রাত একটা৷ কনকনে ঠান্ডা৷ চার দিক ঢাকা কুয়াশায়৷ তার মধ্যেই খোলা আকাশের নীচে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে বেশ কয়েক জন৷ তাঁদের কেউ রয়েছেন বসে, কেউ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছেন৷ আর ওই শুয়ে থাকা মানুষদের কম্বল ঘেঁষে ঘুমিয়ে রয়েছে কুকুরও৷

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে, বিশেষ করে হাসপাতালের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব চত্বরে প্রতিদিনের রাতের চিত্র এটাই৷ পিপিপি মডেলে হাসপাতাল চত্বরে রোগীর আত্মীয়দের থাকার একটা জায়গা রয়েছে বটে, কিন্তু সেখানে চার জন মহিলা সহ ২২ জন থাকতে পারেন৷ ফলে তাঁদের বেশির ভাগেরই জায়গা হয় প্রতীক্ষালয়ের মেঝেতে৷ আর যাঁরা জায়গা পান না, তাঁদের দশা হয় এমনই৷ হাড় হিম করা ঠান্ডায় এ ভাবেই খোলা আকাশের নীচে কখনও বসে, তো কখনও কুকুরের পাশে শুয়ে কাটাতে হয় তাঁদের৷

হলদিবাড়ির বাসিন্দা রাজেন্দ্রনাথ রায়ের মেয়ে এই মুহূর্তে ভর্তি জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে৷ রাজেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, ‘‘দু’দিন ধরে কার্যত হাসপাতালেই পড়ে রয়েছি৷ মেয়ের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় রাতে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের কাছাকাছি থাকতে হচ্ছে৷ এখানে রোগীর আত্মীয়দের থাকার জায়গা নেই৷ আবার হাবের ভেতরে ঢোকারও উপায় নেই৷ ফলে এই শীতে রাতে খুব কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে৷’’

আর এক রোগীর আত্মীয় দিলীপ দাস বলেন, ‘‘অনেক সময় এমন হচ্ছে, রাতে কম্বল মুড়ে শুয়ে রয়েছি৷ আচমকা দেখছি আমার গা ঘেঁষে একটা কুকুরও শুয়ে রয়েছে৷ উঠে তাকে তাড়াতেই সে হয়তো আর একজনের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল৷’’ হাসপাতালের এক নিরাপত্তা রক্ষীর কথায়, ‘‘প্রতি রাতে এ ভাবেই খোলা আকাশের নীচে প্রায় ৪০-৫০ জন রোগীর আত্মীয় থাকেন৷ মানবিকতার খাতিরে মহিলাদের তবুও বিল্ডিং-এর ভেতরে থাকতে দেওয়া হয়৷ কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না৷’’

কিন্তু শহরেরই এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এ ভাবে রাস্তার কুকুরের পাশে শুয়ে থাকলে মানুষের নানা ধরনের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে৷ পাশাপাশি কুকুরটি কামড়ে দিলে বা কোনও ভাবে কুকুরের নখের আঁচর লাগলেও সেই মানুষের রোগ সংক্রমণ হতে পারে৷’’

তবে হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল ছাড়াও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও শীঘ্রই রাতে রোগীর আত্মীয়দের থাকার ব্যবস্থা হবে৷’’ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনও বলেন, ‘‘হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের জন্য দ্রুত রাত্রি নিবাস তৈরি করা হবে৷ তখনই এই সমস্যা মিটে যাবে৷’’

অন্য বিষয়গুলি:

hospital Patient Family Members Dog
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE