মিষ্টিমুখ। নিজস্ব চিত্র
সকাল সকাল হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা নিয়ে হাজির তৃণমূল নেতা। গ্রামে ঢুকেই হাঁক দিচ্ছেন, ‘‘কী গো ইসলাম কাকা, বাড়িতে আছ?’’ গরুর গোয়াল থেকে ইসলাম কাকা বাইরে বেরোতেই তাঁর মুখে মিষ্টি পুরে দিলেন শাসক দলের নেতা। ‘‘আরে করছ কি, করছ কি!’’, কাকার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ‘‘এই নাও আর একটা খাও’’, বলে আর একটি মিষ্টি। তার পরেই ওই নেতা বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। দরখাস্তে সই করো।’’ সঙ্গে বলছেন, ‘‘আমরা দিদির দূত। এলাকায় কী-কী সমস্যা রয়েছে, সব আমাদের জানাও।’’ বিরোধীরা অবশ্য হাঁড়ির রসগোল্লা দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তাঁদের কথায়, ‘‘আসলে তৃণমূলের ডাকে আর মানুষ সাড়া দিচ্ছে না। তাই মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন।’’
বুধবার তৃণমূলের কোচবিহার ২ ব্লকের গোপালপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি সুব্রত চাকদার মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন সোনারি কাকরিবাড়ি নামে একটি গ্রামে। তিনি নিজেই ২৪টি বাড়ি ঘুরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বাঙালির রীতি। সকলের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছি, একটু মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছি। তাতে সবাই খুশি হচ্ছেন।’’ তাঁদের ওই কর্মসূচি ধারাবাহিক ভাবে চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বেশ কিছু দিন ধরেই ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি চলছে। তাতে অঞ্চল ধরে বাছাই করা কর্মীদের ‘দিদির দূত’ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সব তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন। বাসিন্দাদের কাছ থেকে এলাকার সমস্যার কথা শুনেছেন। তার মধ্যে দিন কয়েক হল শুরু হয়েছে একশো দিনের কাজে সই সংগ্রহ অভিযান। সে কাজে গতি আনতে নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের লক্ষ্য, গোটা রাজ্য থেকে এক কোটি চিঠি সংগ্রহ করার। সেখানে কোচবিহার জেলায় প্রায় ছয় লক্ষ চিঠি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। জেলা তৃণমূল দাবিকরেছে, ইতিমধ্যেই দুই লক্ষ চিঠি সংগ্রহ করতে তারা সমর্থ হয়েছে। বাকি চিঠি সংগ্রহে ব্লক ধরে বৈঠক করছেন কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। কোচবিহার জেলায় প্রায় বারো লক্ষ মানুষের জব-কার্ড রয়েছে। দল মনে করছে, এর মধ্যে কম পক্ষে অর্ধেক মানুষ একশো দিনের কাজ করে টাকা পাননি। তার মধ্যেই এ দিন কোচবিহার ২ ব্লকে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের এই ‘মিষ্টি-কায়দা’।
ওই ব্লক কোচবিহার উত্তর বিধানসভার মধ্যে পড়েছে। ওই বিধানসভা বিজেপির দখলে। তার আগে, ওই বিধানসভা বামেদের দখলে ছিল। ২০১১ সালের পরিবর্তনের পরে, ওই বিধানসভা এক বারের জন্যও দখল করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। বিজেপি দাবি করছে, ওই বিধানসভার একশো দিনের কাজের চিঠি সংগ্রহ করতে নেমে মানুষের সাড়া পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলের নাম শুনলেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ তো সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, কেন ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, কোন দুর্নীতির জন্য। এমন অবস্থার মধ্যে পড়ে মানুষের মন ভোলাতে মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা।’’ তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, একশো দিনের চিঠি সংগ্রহে তারা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy