রবিবার থেকে রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পুরো ক্যাম্পাসে টহলদারি কাজে যুক্ত মাত্র দুজন নিরাপত্তা রক্ষী। ছবি বিনোদ দাস।
রাত তখন সাড়ে ১১টা। দুর্ঘটনায় জখম রোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে এসেছেন লোকজন। অন্য রোগী মিলিয়ে ২০ জনের মতো। সেখানে পরিস্থিতি সামলাতে রয়েছেন মাত্র এক জন নিরাপত্তারক্ষী।
রাত বাড়ছে। মদ্যপ অবস্থায় কিছু লোকজনকে দেখা গেল জরুরি বিভাগের বাইরে ঘুরঘুর করতে। রাত গভীর হলেও এমন ‘অবাঞ্চিত’ লোকজনকে প্রসূতি বিভাগ, নার্সিং হস্টেল লাগোয়া, পোস্ট অফিসের কাছে নেশা করতে দেখা গেল। দোতলার করিডর শুনশান। আলোও কম। দিনে মেডিসিন থেকে প্রসূতি বা ইএনটি, অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে দোতলার করিডর দিয়ে যাতায়াত চললেও রাতে ভয়ে কেউ যেতে চান না। দুই নিরাপত্তারক্ষীকে রবিবার থেকে রাতে টহল দিতে বলা হয়েছে। কম বয়সী এক জনের হাতে টর্চ এবং অপর জন লাঠি হাতে একসঙ্গে ঘুরছেন। ১০৪ একরের এত বড় ক্যাম্পাস টহলের দায়িত্ব কী ভাবে সামলাবেন তাঁরাও পরিষ্কার জানেন না। রাতে মেডিসিনের আটটি ওয়ার্ডের জন্য নিরাপত্তারক্ষী দু’জন। রাতে সব মিলিয়ে ২০-২২ জনের মতো রয়েছেন বলে কর্মীদেরই দাবি। ফলে যে কোনও সময় বড় সমস্যা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসহ থেকে স্বাস্থ্যকর্মী সকলেরই।
রবিবার রাতে এমনই চিত্র ধরা পড়ল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আরজি কর হাসপাতালে ছাত্রী খুনের ঘটনার পর রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এটাই বাস্তব পরিস্থিতি। হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘তিনটি শিফ্টে সাকুল্যে ৮২ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন। হাসপাতালে একের পর এর চুরির ঘটনা ঘটছে। আমরা বার বার বলছি। নিরাপত্তার যে ঘাটতি রয়েছে আমরা তো বলে আসছি।’’ তার উপর যাঁরা রক্ষীর কাজ করছেন তাঁদেরও অভিজ্ঞতা কম বলে তিনি জানান।
ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টারের সামনে অবাঞ্ছিত লোজনদের একাংশের ভিড়। সেখানে কোনও নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলেনি। লোহার গেট আটকে ভিতরে রয়েছেন কর্মীরা। রাতবিরেতে রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে এখানে রোগীর লোকেদের আসতেই হবে। ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। তাদের অবশ্য রাতে টহলদারিতে দেখা যায়নি। কয়েকজনকে ফাঁড়িতেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। শনিবার রাত থেকে ছাত্রীদের চারটে হস্টেলের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট থেকে পাঁচ জন করে মহিলা পুলিশ সব সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুটি ছাত্রী হস্টেলের সামনে এক সঙ্গে বসে রয়েছেন। হস্টেল থেকে হাসপাতালে আলো-আঁধারি রাস্তা পেরিয়ে আসতে হচ্ছে। কয়েকজন পড়ুয়া জানান, গত দু’দিনে পুলিশের সক্রিয়তায় লোকজনের ঘোরাফেরা কিছুটা কমেছে।
বহির্বিভাগের করিডর লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় অন্ধকারের মধ্যে চেয়ারে বসে রয়েছেন রোগীর আত্মীয়দের কয়েকজন। কেউ ও-ভাবেই ঘুমোচ্ছেন। যে কোনও সময় চুরি-ছিনতাই হতে পারে ভেবে নিজের টাকা-পয়সা, মোবাইল রোগীর কাছে ওয়ার্ডে রেখে এসেছেন বলে জানান রাইজুদ্দিন, মহিদুল আলিরা। একজন বললেন, ‘‘ভরসা বলতে করিডর লাগোয়া দোতলায় ইএনটি বিভাগে একজন নিরাপত্তারক্ষী। ১২টা বাজলে তিনিও ওয়ার্ডের গেট আটকে ভিতরে থাকেন। তখন ভয় লাগে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy