প্রতীকী ছবি।
বাড়ি থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরের স্কুলে শিক্ষকতা করেন সোমা কর নিয়োগী। টোটো-অটো পাল্টে স্কুলে যেতে হয়। সোমা বলছিলেন, সকাল দশটায় রওনা হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন বিকেল পাঁচটায়। এই সাত ঘণ্টায় যতই পিপাসা পাক, নামমাত্র জল খেয়ে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সোমার কথায়, “জল খেলেই যদি শৌচাগারে যেতে হয়। এই ভয়ে জল খাই না।’’ কেন? সোমার কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে শৌচাগার ছিল, তার দেওয়ালই নেই। চূড়ান্ত প্রয়োজন হলে আশেপাশের বাড়িতে যেতে হয় এবং তা বিভীষিকা। বাধ্য হয়ে জল না খেয়ে বহু যন্ত্রণা সয়ে চাকরি করে চলেছি।” যার ফলে একাধিক রোগ বাসা বেঁধেছিল শরীরে, বহুবার চিকিৎসকও দেখিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী-রোগ নিয়ে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জলপাইগুড়ি জেলার শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, স্ত্রীরোগের আঁতুড়ঘর হয়ে রয়েছে সরকারি স্কুলগুলিই। জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ১২০৩। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চা বাগান রয়েছে। সেখানকার বহু স্কুলে পড়ুয়াদের জন্যও যথাযথ আড়াল দেওয়া শৌচাগার পর্যন্ত নেই, দাবি শিক্ষামহলেরই। বেরুবাড়ির স্কুলের শিক্ষিকা পৌলমী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের স্কুলে শিক্ষিকাদের জন্য কোনও শৌচাগার নেই। বাধ্য হয়ে হয়তো গ্রামের কোনও বাড়িতে যেতে হল। গিয়ে এমনও দেখেছি, সেখানে শৌচাগারে কোনও আড়াল নেই। প্রতিদিন যন্ত্রণা চেপে থেকে, স্বাভাবিক ভাবেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়।”
চিকিৎসকদের পরামর্শ, পিরিয়ড বা ঋতু চলাকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শৌচাগারই ব্যবহার করতে হবে। জেলার শিক্ষিকাদের দাবি, তেমন উপায় অন্তত জলপাইগুড়ির সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে নেই। শহর লাগোয়া একটি চা বাগানের স্কুলের শিক্ষিকার কথায়, ‘‘যে দিনগুলিতে পিরিয়ড চলে, তখন প্রচণ্ড অসহায় বোধ করি। মনে হয় মেয়েদের বুঝি চাকরি করার অধিকার নেই।” শৌচাগার না থাকায় তীব্র শারীরিক কষ্ট দিনের পর দিন ভোগ করতে হয়েছে বলে সেই দিদিমণি দাবি করলেন। বর্তমানে তাঁর ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, ইউটিএসেও আক্রান্ত হয়েছেন।
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি নির্মল সরকার বললেন, “শিক্ষামন্ত্রী সারা রাজ্যে বদলির আবেদনের নানা দাবি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। ছাত্রীদের জন্য যে শৌচালয়, তা ভাগ করে একটি অংশ শিক্ষিকাদের জন্য করে নেওয়া যেতে পারে।” এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝায়ের মন্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রীই তো শিক্ষিকাদেরও অভিভাবক, তিনি এমন বলতে পারলেন! উনি এটাও ভুলে গেলেন যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একজন মহিলা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy