ফালাকাটা শহরে পানীয় জল সরবরাহের ভার কার হতে থাকবে, সেই প্রশ্নে কার্যত সমরে নেমেছে পুরসভা ও আলিপুরদুয়ার জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর (পিএইচই)। পিএইচইর জেলা আধিকারিকদের দাবি, ফালাকাটা ইতিমধ্যে পুরসভা হয়ে গিয়েছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে আর ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের কাজ সম্ভব নয়। এই অবস্থায় প্রকল্পের যতটুকু কাজ হয়েছে, তা হস্তান্তর করতে পুরসভার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। পুরসভার অভিযোগ, ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে পিএইচই ফালাকাটা শহরে যে কাজ করেছে, সেটা নিম্নমানের। ফলে সেই প্রকল্প নিজেদের হাতে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অভিযোগ, পুরসভা ও পিএইচই-র কাজিয়ার মাঝে পড়ে জল সমস্যায় ভুগছেন শহরের মানুষ, আকাল পড়েছে তেষ্টার জলের।
২০২১ সালে ফালাকাটাকে পুরসভা হিসেবে ঘোষণা হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, পুরসভা গঠিত হওয়ার আগে ফালাকাটায় পিএইচই ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। অভিযোগ, সেই কাজে ‘দুর্নীতি’ হয়। পিএইচই জানিয়েছিল, প্রায় ১২ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে পুরসভা সমীক্ষা করে দেখে, মাত্র প্রায় পাঁচ হাজার বাড়িতে সেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার একটি বাড়িতে একাধিক বাসিন্দার আধার কার্ডের ভিত্তিতে একাধিক সংযোগ দিয়ে বাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়। প্রকল্পের কাজও অত্যন্ত নিম্নমানের। ভূগর্ভস্থ পাইপ মাঝেমধ্যে ফেটে যাচ্ছে। অনেক বাড়িতে জলের সংযোগ না-যাওয়া সত্ত্বেও খাতায়-কলমে তা দেখানো হয়েছে।
পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার জেলার আধিকারিকেরা অভিযোগের ব্যাপারে তাঁরা অবগত। তা নিয়ে ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে ফালাকাটা পুরসভা হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, নতুন করে ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ফালাকাটা পুর এলাকায় ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে, তার নকশা-সহ বিস্তারিত তথ্য পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে। পিএইচই-র আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার ধীরাজ মণ্ডল বলেন, ‘‘ফালাকাটা শহরে জলস্বপ্নের যে কাজ হয়েছে, সেটা পুরসভাকে হস্তান্তর করতে একাধিক বৈঠক হয়েছে। আশা করি উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে।’’
যদিও ফালাকাটা পুরপ্রধান প্রদীপ মুহুরি বলেন, “পিএইচই-র কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রায় পাইপ ফেটে যাচ্ছে। জলের সমস্যায় পড়ছেন শহরবাসী। এমন একটা প্রকল্প আমরা যদি হাতেও নেই, তার রক্ষণাবেক্ষণ পুরসভার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই অম্রুত-২ প্রকল্পে বেশি জোর দিচ্ছি।” ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প পুরসভা হাতে নেবে কি না, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)