Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
অ্যাপ দিয়ে যায় চেনা

মুঠোয় ভরা পুজোর হদিশ, ত্রাতাও অ্যাপ

এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরেও কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না হদিশ। শেষে ত্রাতা হল স্মার্টফোন। আঙুলের ছোঁয়ায় নিমেষে স্ক্রিনে ভেসে উঠল পুজো মণ্ডপের ঠিকানা। সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যাওয়ার সুলুক সন্ধান। হইহই করে পা চালালো সদ্য কলেজে ঢোকা পড়ুয়াদের দল।

কৌশিক চৌধুরী ও অভিরূপ দত্ত
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরেও কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না হদিশ। শেষে ত্রাতা হল স্মার্টফোন। আঙুলের ছোঁয়ায় নিমেষে স্ক্রিনে ভেসে উঠল পুজো মণ্ডপের ঠিকানা। সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যাওয়ার সুলুক সন্ধান। হইহই করে পা চালালো সদ্য কলেজে ঢোকা পড়ুয়াদের দল।

এ বার পুজোয় শিলিগুড়িতে এমন দৃশ্য দেখা যেতেই পারে ‘অ্যাপ দেবতার’ কল্যাণে। পছন্দসই খাবার থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার হালহকিকত বা দিনের যেকোনও সময়ে ট্যাক্সি সবই এখন মুঠোফোনের ইন্টারনেটে বন্দি। পুজোতেও কি পিছিয়ে থাকা যায়? তাই শহরের বড়-ছোট-মাঝারি পুজো গুলিকে খুঁজে পেতে ভরসা জোগাচ্ছে ভার্চুয়াল দুনিয়া। নির্দিষ্ট সাইট থেকে পছন্দের অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিলেই কেল্লাফতে। জিপিএস-র মাধ্যমে ব্যবহারকারী কোথায় আছেন আর তাঁর কাছাকাছি পুজো মণ্ডপ কোথায় সবই তখন চোখের সামনে হাজির। জেনে নেওয়া যাবে পথ নির্দেশও।

শিলিগুড়িবাসীর পুজোয় এবার লেগেছে এমনই অ্যাপের ছোঁয়া। শিলিগুড়ি পুলিশের তরফে যে অ্যাপ নিয়ে আসা হয়েছে, সেখানে জিপিএস প্রযুক্তির সাহায্যে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে শিলিগুড়ির প্রায় সমস্ত পুজো মণ্ডপের অবস্থান। সঙ্গে মিলবে সেখানে পৌঁছে যাওয়ার পথনির্দেশও। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের জারি করা নির্দেশনামাও মিলবে সেই অ্যাপে। কোন সময় কোন রাস্তায় বন্ধ থাকবে যান চলাচল জানা যাবে তাও। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে সেই অ্যাপের লিঙ্ক। সেখান থেকেই তা সরাসরি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন যে কেউ।

কিন্তু শুধুই তো আনন্দ নয়। পুজোর ভিড়ে বা অচেনা রাস্তায় তো থেকে যায় বিপদের সম্ভাবনাও। সেক্ষেত্রেও মুশকিল আসান হবে সেই অ্যাপই। এই অ্যাপে রয়েছে ‘প্যানিক বাটন’, কোনওরকম বিপদে সাহায্যের জন্য অ্যাপ ব্যবহারকারী সেটি ছুঁয়ে দিলেই সরাসরি ফোন চলে যাবে শিলিগুড়ি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে তৎক্ষণাৎ জেনে যাবে সেই ব্যক্তি কোন জায়গায় রয়েছেন। ওই অ্যাপে রয়েছে কোনও ঘটনা নথিভুক্ত করার সুবিধেও। ঘুরতে বেরিয়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখলে অ্যাপ ব্যবহারকারী ছবি তুলে বিবরণ-সহ কোন এলাকায় তা ঘটছে তা জানাতে পারবেন।

আপৎকালীন প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে শিলিগুড়ির পুজোর কমিটির নম্বর থেকে স্থানীয় থানার ফোন নম্বর সব কিছু এক জায়গায় এনে হাজির করা হয়েছে সেই অ্যাপে। দেওয়া রয়েছে প্রতিটি থানার তরফে একজন করে পুলিশ আধিকারিকের নম্বর। দুর্গাপুজোর অগ্নিকাণ্ডের বিপদের কথা মাথায় রেখে সেই অ্যাপে রয়েছে শিলিগুড়ির দমকল কেন্দ্রের যোগাযোগ নম্বর।

ঘুরতে বেরিয়ে দর্শনার্থীদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও আকছার শোনা যায়। সেরকম হলেও দুশিন্তা অনেকটাই কমবে শিলিগুড়ি পুলিশের এই অ্যাপের সাহায্যে। শিলিগুড়ি, কদমতলা, নকশালবাড়ি-সহ কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল-সহ একাধিক হাসপাতালের ফোন নম্বর রয়েছে সেই অ্যাপে। জিপিএস-র মাধ্যমে দেখে নেওয়া যাবে ঘটনাস্থল থেকে সেই হাসপাতাল বা থানায় পৌঁছনোর পথনির্দেশও। পাশাপাশি সেই অ্যাপেই রয়েছে শিলিগুড়ি কিছু ওষুধের দোকানের নাম ও ফোন নম্বরও।

এই অ্যাপ নিয়ে শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উৎসাহ যে তুঙ্গে তা জানাচ্ছেন এই অ্যাপের দায়িত্বে থাকা শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি (ডিডি) অরিন্দম সরকার। তিনি বলেন, ‘‘প্রচুর মানুষ যোগাযোগ করছেন এই অ্যাপের বিষয়ে নানা প্রশ্ন নিয়ে।’’ এই অ্যাপের সাহায্যে শিলিগুড়ির পুলিশ ও বাসিন্দাদের মধ্যে সমন্বয় যে বৃদ্ধি পাবে সে কথাও জানান তিনি। এই সমন্বয়ের কথা মাথায় রেখেই পুজোর সময় ছাড়াও বছরের অন্য সময়েও যাতে এই অ্যাপ রাখা যায় সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কর্তারা।

পুজোয় ঘোরার সঙ্গে খাওয়াও বড় আকর্ষণ। সারাদিন ঘোরার পর রসনাতৃপ্তির জন্য পছন্দসই রেস্তোরাঁর খোঁজ তো সকলেরই থাকে। সেখানেও চমক রাখছে এই অ্যাপ। সেখানে থাকছে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর খোঁজ ও সেখানে যাওয়ার উপায়। শিলিগুড়ির বাসিন্দা তরুণ অর্কদীপ দাস ভূয়সী প্রশংসা করলেন এই উদ্যোগের। তাঁর কথায়, "এতদিনে মনে হচ্ছে সুরাহা হবে, পুজোয় যেকোনও দরকারে হাতের কাছে সাহায্য পাওয়া যাবে।"

পুজোয় উত্তরবঙ্গের অনেকেই কলকাতাতেও যান। সেখানে গিয়েও সাহায্য পাওয়া যাবে কলকাতা পুলিশের তরফে আনা ঠিক এরকমই এক অ্যাপের। সেখানেও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের হদিশ ছাড়াও থাকছে ‘প্যানিক বাটন’। পুজোর ভিড়ে কোনও সঙ্গী হারিয়ে গেলেও অভয় দেবে ওই অ্যাপ। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির ছবি অ্যাপে ডাউনলোড করে দিলেই তা পৌঁছে যাবে পুলিশ ও ওই অ্যাপের ব্যবহারকারী সকলের কাছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে কেউ তা সরাসরি জানাতে পারবেন ওই অ্যাপের মাধ্যমে। কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (এসট্যাব্লিসমেন্ট) সুজয় কুমার চন্দ বলেন, ‘‘প্রচুর মানুষ প্রশংসা করছেন এই অ্যাপের। তাঁরা ব্যবহার করে খুশি।’’ তাঁর আশা এর ব্যবহার পুজোর দিনগুলিতে আরও বাড়বে। পছন্দের পুজো মণ্ডপে গিয়ে নিজস্বী তুলে তা ‘শেয়ার’ করাও যাবে ওই অ্যাপের মাধ্যমে। জেন-ওয়াই-র কাছে তা অন্যতম আকর্ষণ।

অন্য বিষয়গুলি:

apps durga puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE