পূর্ণিমার অপেক্ষায় রাত জাগছে বালুরঘাটের ফরিদপুর গ্রাম। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পূর্ণিমা দেবনাথের দেহ নিয়ে আত্মীয়রা কলকাতা থেকে রওনা হয়েছেন। এলাকায় খবর পৌঁছতেই বাসিন্দাদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রহর গোনার পালা। তারা কখন পৌঁছবেন? নীরব প্রশ্ন বাসিন্দাদের নিজেদের মধ্যে ঘুরেছে। প্রতিবেশী এক প্রবীণ বীরেন দেবনাথের কথায়, ‘‘পূর্ণিমার দেহ পৌঁছতে গভীর রাত হয়ে যেতে পারে। তাই ধরে এ দিন রাত যত বেড়েছে প্রতিবেশীদের চোখ আটকে রয়েছে বড় রাস্তার দিকে।’’
হবে না কেন? এলাকার মেধাবী হাসিখুশি মেয়েটি এ ভাবে শেষ হয়ে যাবে, পরিবারের মতো তাঁরাও কেউ ভাবতে পারছেন না। গত রবিবার গভীর রাতে কলকাতার এক অভিজাত ক্লাবে শিক্ষানবিশ ওই ছাত্রী পূর্ণিমার (১৭) ঝুলন্ত দেহ স্টাফ কোয়ার্টারের ঘর থেকে উদ্ধার হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, সহকর্মী কোনও ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে মেয়েটি আত্মঘাতী হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথাই বলা আছে বলে পুলিশ এ দিন কলকাতায় পূর্ণিমার বাড়ির লোকদের জানিয়েছে। তবে তাঁর বাবা ও মায়ের মতো পড়শিদের একাংশও তা মানতে পারছেন না। এ দিনও গোটা ফরিদপুর এলাকা জুড়ে হাওয়ায় একটাই প্রশ্ন ভেসে বেড়িয়েছে, ‘‘কেন? কার দোষে মেয়েটি আত্মহত্যা করল?’’
এলাকার ছাত্রী মিঠু দেবনাথ কিংবা গৃহবধূ কবিতাদেবীরা জানান, চরম দারিদ্র ও অভাব সত্ত্বেও লেখাপড়ার প্রতি একাগ্রতা পূর্ণিমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মাত্র তিন মাস বাদে হসপিটালিটি কোর্স শেষ হওয়ার পর পূর্ণিমার বড় হোটেলে চাকরি বাঁধা ছিল বলে তাঁরা জানতেন। বালুরঘাট আইটিআইয়ের অধ্যক্ষ কুন্তল ঘোষও বলেন, ‘‘মেয়েটি খোলামেলা ছিল। পড়াশোনাতেও ছিল সমান মনোযোগী। এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণকালে ওকে সকলের সঙ্গে মিশতে দেখেছি। কোর্স শেষে ওর চাকরি বাধা ছিল।’’
সোমবার মেয়ের অপমৃত্যুর খবর পেয়ে রাতে কলকাতায় রওনা হয়েছিলেন প্রকাশবাবুরা। মঙ্গলবার সকালে কলকাতায় পৌঁছন পূর্ণিমার বাবা প্রকাশ দেবনাথ, ভাই প্রতাপ সহ চার আত্মীয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে দেহ হস্তান্তরের যাবতীয় প্রক্রিয়াতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। অবশেষে এদিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তারা পূর্ণিমার মরদেহ গাড়িতে নিয়ে বালুরঘাটের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। টেলিফোনে প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উল্লেখ করে আরও জানিয়েছে, পূর্ণিমা নাকি তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে লিখে গিয়েছে। একটা কাগজে ওই লেখাও আমাকে দেখানো হয়।’’ কিন্তু দিনমজুর প্রকাশবাবু মেয়ের হাতের লেখা চেনেন না বলে জানিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘কী থেকে কী হয়ে গেল।’’ বালুরঘাটে পৌঁছে তিনি পরবর্তী বিষয় ভাববেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy