এমনই ঠাসাঠাসি ভিড় থাকে মালদহ মেডিক্যােলর শিশুদের ওয়ার্ডে। তাই কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে, তাই নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন মায়েরা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
পাশের জেলায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে নড়ে বসেছেন মালদহ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার পরই আমরা আমাদের হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক রয়েছে কি না তা দেখছি। হাসপাতালের দুটি এসএনসিইউ, সিসিইউ, ওটি এবং যে ওয়ার্ডগুলিতে সবসময় এসি চলে সেগুলির ও হাসপাতালের বৈদ্যুতিক লাইনগুলি চেক করতে পূর্ত দফতরের বিদ্যুত বিভাগকে বলা হয়েছে। দমকল বিভাগকেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক রয়েছে কি না তা এসে দেখতে বলা হয়েছে।’’
হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা অবশ্য বলছেন, হঠাৎ বিপদ এলে কী হবে তা বলা যায় না। কারণ, হাসপাতালের তিনতলায় থাকা চিলড্রেন ও নিওনেটাল ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার পথ একটাই। ওই দুটি ওয়ার্ডে কোনও আপতকালীন দরজাও নেই। এমনিতেই চিলড্রেন ওয়ার্ডে সবসময় বেডের চেয়ে দ্বিগুণ শিশু ভরতি থাকে। শিশুদের সঙ্গে মায়েরাও রয়েছে। ওই দুটি ওয়ার্ডে ফায়ার এক্সটিংগুইশারের সংখ্যাও অপ্রতুল। ফলে কোনও কারণে যদি ওই দুটি ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যায় তবে কিন্তু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। একটাই ভরসা যে ওই দুটি ওয়ার্ড থেকে নামতে সিঁড়ি রয়েছে। হাসপাতালের দোতলায় থাকা ওয়ার্ডগুলিতেও অগ্নিনর্বাপক যন্ত্রের সংখ্যা কম রয়েছে। তাই উদ্বেগ কাটছে না রোগী ও তাদের পরিজনদের।
জেলার রোগী তো বটেই, আশপাশের জেলা এমনকী বিহার থেকে আসা রোগীদের চাপে বেড পাওয়াই দুষ্কর মালদহ মেডিক্যালে। হাসপাতাল ৭৫০ বেডের হলেও প্রতিদিনই ১৫০০-১৭০০ রোগী ভরতি থাকছেন। তাই রোগীর ভিড়ে দমবন্ধ অবস্থা হাসপাতালের। হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা মেল মেডিক্যাল, ১ ও ২ এবং প্রসূতি বিভাগে বেডের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী রয়েছেন। তিনতলায় থাকা চিলড্রেন ওয়ার্ডেও মারাত্মক ভিড়। ৭০ বেডের ওই ওয়ার্ড ১৫২টি শিশু ভর্তি। শিশুদের সঙ্গে তাঁদের মায়েরাও রয়েছেন। এক একটি বেডে মা ও শিশু মিলিয়ে চারজন করে রয়েছেন। মেঝেতেও অনেক মা ও শিশু রয়েছে। মুর্শিদাবাদের ঘটনা শুনে মায়েরা আতঙ্কিত। তাঁরা বনলেন, ‘‘তিনতলায় এই ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার পথ একটাই। কোনও বিপদ হলে একটিই পথ দিয়ে নামতে গেলে হুড়োহুড়িতে মুর্শিদাবাদের মতোই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যেতে পারে। এই ওয়ার্ড স্থানান্তরিত করা দরকার।’’ তবে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর রমাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত মাসে সমিতির যে বৈঠক হয়েছিল সেখানেই এই হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ হাসপাতালের ঘটনার পর আমরা এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেব।’’
মালদহ জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও ওয়ার্ডগুলি কিন্তু সেই মান্ধাতা আমলের বিল্ডিংয়েই চলছে। মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে আউটডোরের জন্য ঝাঁ চকচকে নতুন বিল্ডিং হয়েছে। কিন্তু রোগীরা যেখানে থাকেন সেখানে পরিস্থিতি সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের ইন্ডোরে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও পুরোনো। রোগীদের অভিযোগ, ওয়ার্ড ও বাইরে অগ্নিনির্বাপণের এক্সটিংগুইশারের সংখ্যাও কম। একই পরিস্থিতি দোতলায় থাকা মেল ও ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডেও। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে মোট ৭৭টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। সেগুলি চলতি জুন মাসেই নবীকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে মাদার-চাইল্ড হাব তৈরির কাজ শেষের পথে। সেটি চালু হলে চিলড্রেন ওয়ার্ড সেখানেই স্থানান্তরিত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy