এমন নোট ভাঙানোই এখন চিন্তা সব ঘরে। — নিজস্ব চিত্র
পেট চলে দিনমজুরি করে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নেই অধিকাংশের। এই পরিস্থিতিতে ধার করে আনা চাল, ডালেই সংসার চালাতে হচ্ছে পুরাতন মালদহের সাহাপুরের দক্ষিণ ভাটরা গ্রামের একাধিক পরিবারকে।
নোটের আকালে এখন মজুরি করেও মিলছে না পারিশ্রমিক। বাড়িতে রয়েছে পাঁচ পাঁচটি পাঁচশোর নোট। সেই নোট দিয়ে মিলছে না খাবারও। বাড়ির আসে পাশে নেই ব্যাঙ্কও। তাই আশপাশের বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে নিয়ে আসতে হচ্ছে চাল, ডাল। উপসী রায়, কাজল চৌধুরীরাই নন, এমন অবস্থা দক্ষিণ ভাটরা গ্রামের অনেকের পরিবারেই।
পুরাতন মালদহ ব্লক সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার রয়েছে। মাটির দেওয়ালের উপরে টালির ছাউনি দেওয়া ঘরের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশ পরিবারের সংসার চলে দিনমজুরি থেকে রোজগারে। গ্রামের ৬০ শতাংশ পুরুষ ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছেন। বাড়ির মহিলারা কেউ নির্মাণ শ্রমিক, আবার কেউ অন্যের জমিতে মজুর হিসেবে কাজ করে রোজকার খাবার জোগাড় করেন। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেরই কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। গ্রাম থেকে নিকটতম ব্যাঙ্কের দূরত্ব আট কিলোমিটার। তাই ঘরে থাকা সম্বল হিসেবে বাতিল নোট নিয়ে রীতিমতো অসহায় গ্রামবাসীরা।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে রোজ উপার্জন হয় ১৭৫ টাকা। মির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে দিনে আয় হয় ২২০ টাকা। রোজ কাজ করলে তবে উনুনে হাঁড়ি চড়ে গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে। নোট বাতিলের সরাসরি প্রভাব পড়েছে তাঁদের রুজি রোজগারে। শ্রমিকের কাজ করলেও খুচরো না থাকায় মিলছে না পারিশ্রমিক। উপসীদেবী বলেন, ‘‘ছেলেরা ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে দিনমজুরি করে দিন আনি দিন খাই। খুচরো না থাকার জন্য কাজ করেও মজুরি পাচ্ছি না। পাঁচশো, হাজারের নোটের মতো আমাদের সংসারও অচল হয়ে গিয়েছে।’’ বিপাকে পড়েছেন কাজল চৌধুরীও। তিনি বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকায় বাড়িতেই কিছু কিছু করে টাকা সঞ্চয় করে রাখতাম। খরচ যাতে না হয়, সেই জন্য খুচরোর বদলে পাঁচশোর নোট করে রেখেছিলাম। হঠাৎ করে সেই নোট গুলি অচল হয়ে যাওয়ায় মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এখন বাড়িতে টাকা থেকেও ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’’
গ্রামে কয়েকজনের জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট থাকলেও অধিকাংশেরই তাও নেই। গ্রামেরই বধূরা জানাচ্ছেন, কখন ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয় তা তাঁরা জানতে পারেননি। পুরুষেরা রোজগারের খোঁজে বাইরে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের এই পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষদের টাকা হাতানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু কারবারীরা। পাঁচশো টাকা খুচরো করলে দেওয়া হবে চারশো, হাজারে দেওয়া হবে আটশো — গ্রামবাসীকে এমনই টোপ দিচ্ছে অসাধু কারবারীরা। বাসিন্দা পবন ঘোষ বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই। এছাড়া ব্যাঙ্ক দূরে হওয়ায় পাঁচশো ও হাজার টাকা খুচরো করতে পারছি না। অনেকে আবার বলছেন খুচরো নিতে হলে কমিশন নেবেন। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তনুজা রায় বলেন, ‘‘মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। আমরা পাশে রয়েছি। প্রত্যেককে ব্যাঙ্কে গিয়ে পাঁচশো ও হাজারের নোট খুচরো করার কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy