আক্রান্ত: হাসপাতালে দিলীপ বর্মন। নিজস্ব চিত্র
এক বছরের ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কেরল থেকে ভাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পাশের গ্রামেই ছেলেধরা সন্দেহে মার খেতে হয়েছিল দিলীপ বর্মনকে। লাঠিসোঁটা, রড দিয়ে শুধু দিলীপই নন, প্রহৃত হয়েছেন তাঁর ভাই বিনোদ বর্মন ও গাড়ির চালক আজাদ ও তাঁর ভাই আইনুল হক। বুধবারেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর চার জনকে ফালাকাটা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও পরদিন দিলীপ মাথায় ব্যথা অনুভব করায় ফের হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতালের বেড থেকেই গ্রামের শান্তি কামনা করলেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চেনা গ্রামটাই পাল্টে গিয়েছে। যে গ্রামে বড় হলাম। নদী পার হয়েই যে জায়গায় এক সময় খেলাধুলো করতে যেতাম, সেখানে আমি পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও মানুষ ছেলেধরা সন্দেহে পেটালো। গ্রাম এত অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। এটা মেনে নিতে পারছি না। আমি চাই গ্রামে মানুষ শান্তিতে থাকুক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু মারধর নয়, ঘটনার পর একটু সুস্থ হয়ে জানতে পারি আমরা কেরল থেকে যে প্রায় ৪০ হাজার মতো টাকা নিয়ে এসেছি, সেটিও খোয়া গিয়েছে। কেউ হয়তো টাকা হাতানোর জন্যই ছেলেধরা গুজব ছড়াচ্ছে। আমি চাই তাদের শাস্তি হোক। যাতে আমার মতো অন্য কাউকে কেউ মারধর করতে না পারে।’’
অন্য দিকে দিলীপের বাড়ি জুড়ে হা-হুতাশ। তার বাবা মা নাতির মৃত্যু শোক ভুলতে না ভুলতে গ্রামের মানুষের হাতে ছেলেদের মারধর মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরাও শাস্তি চেয়েছেন দোষীদের।
বাবা দীনেশ্বর বর্মন ও মা দীনবালা বর্মন সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারছেন না। দিলীপের মা আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘আট দিন হল নাতি মারা গিয়েছে। সন্তানহারা ছেলেটাকে মানুষ পেটাল মিথ্যা গুজবে। আমি চাই যারা মেরেছি তাদের শাস্তি দিক প্রশাসন।’’ দীনেশ্বরবাবু আবার পুলিশের প্রতি আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় একটা ঘটনা। নির্বিচারে আমার ছেলে দুটিকে মারধর করলো। পুলিশ আমাদের বাড়ি এল না, খবর নিতে। দুইজনকে শুধু গ্রেফতার করেছে। অথচ আমার ছেলেরা বলছে শত শত মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে।’’ মুকুলডাঙ্গায় যেখানে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন গ্রামবাসীরা, সেখানে যে স্থানে ঘটনা হয়েছে সেই দেওয়ানবস এলাকায় উল্টো ছবি। গোটা গ্রামে পুরুষশূন্য। দিন রাত পুলিশি টহলদারি চলছে। গ্রামে শান্তি ফেরাতে পুলিশের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে বড় শৌলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উৎপল বিশ্বাস। তিনি গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছেন, যাতে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘যা হয়েছে খুবই খারাপ হয়েছে। এরকম ঘটনা যাতে না হয় সেজন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, দেওয়ানবস এলাকার ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের ঘটনায় এলাকার বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন সমস্ত দোষ চাপিয়েছে বিজেপি-র উপর। তিনি বলেন, ‘‘গোটা দেশে বিজেপি যেখানে আছে সেখানে হিংসা ছড়াচ্ছে। দেওয়ানবস এলাকাতেও বিজেপি কর্মীরা রাজ্যের নাম বদনাম করার জন্য হিংসা ছড়াচ্ছে। বিজেপি ও আরএসএস কর্মীদের মদতে সেদিন এলাকায় ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে মারধর করেছে কয়েকজন যুবককে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ঘোকসডাঙা থানাকে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করে প্রচার ও দোষীদের গ্রেফতারের কথা জানিয়েছি। প্রশাসন কড়া হাতে বিজেপি কর্মীদের হিংসা বাড়ানোর চক্রান্ত বন্ধ করবে।’’
যদিও বিজেপি-র মাথাভাঙা বিধানসভার পর্যবেক্ষক তথা জেলা কমিটির সদস্য সুশীল বর্মন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার জঙ্গলরাজ চালাচ্ছে। ঠিক মতো রাজ্য চালাতে পারছে না অন্য দিকে সমস্ত ক্ষেত্রে বিজেপি-র ভূত দেখতে পারছেন। প্রশাসন ব্যর্থ ছেলে ধরা গুজব আটকাতে। তাই বিজেপি-র উপর দোষ দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy