প্রতীকী ছবি।
এক একবার হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখছেন। আবার অধৈর্য্য হয়ে পা নাড়ছেন। কিছুক্ষণ পরে ফোন করে জানতে চাইছেন, কত দূর? যার জন্য অপেক্ষা, সে দিন সে চোখে ধুলো দিয়ে চলেই গিয়েছিল প্রায়। আট ঘণ্টা অপেক্ষার পরে নিশ্চিন্ত হন জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার। ‘সোর্স’-এর দেওয়া খবর মিলেছে শেষ পর্যন্ত। সন্দেহজনক ট্রাকটিকে আটক করে তল্লাশি চালিয়ে মিলেছে প্রায় ৩০০ কেজি গাঁজা। কিন্তু সোর্সের দেওয়া ট্রাকের নম্বর মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, নজরদারি ফাঁকি দিতে প্রায় ৯২৩ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার পথে চার বার নম্বর প্লেট বদলানো হয়েছে, এজেন্টদের মোবাইলের সিম বদলানো হয়েছে অন্তত সাত বার।
ত্রিপুরা থেকে উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য ঘুরে আলিপুরদুয়ার জেলা হয়ে জলপাইগুড়ির পথে আসছে এই গাঁজা। তার পর জলপাইগুড়ি শহর ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে দিল্লি বা কলকাতা। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার বিশালগড় মহকুমায় মধুপুর, কোণাবন, নেহালচন্দ্রনগরের মতো জায়গায় গাঁজা চাষ হয়। একই ভাবে ওই জেলার সোনামুড়া মহকুমায় কমলনগর, কলমচৌড়া, মানিক্যনগরেও চলে চাষ। এর পাশাপাশি পাহাড়ি ধলাই জেলার লংতরাই উপত্যকা, মনু, আমবাসাতে জুম পদ্ধতি গাঁজা চাষ বলে দাবি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। ত্রিপুরা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই ধরনের নেশার দ্রব্য পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশের এক আধিকারিকের জেল পর্যন্ত হয়েছে, সাসপেন্ড হয়েছেন পাঁচ আধিকারিক।
বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই সব জায়গায় পাহাড়ি নদী থেকে সারা বছর জল মেলে। তাই চাষেরও সমস্যা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে গাঁজা সীমান্ত টপকে যায় বলেও দাবি পুলিশ সূত্রে। বাকিটা অসমের করিমগঞ্জ, গুয়াহাটি হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে।
আলিপুরদুয়ার ঢোকার পরে দু’টি পথ ব্যবহার হয় বলে পুলিশ জেনেছে। একটি আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি জাতীয় সড়ক হয়ে, একটি কোচবিহারের গ্রামীণ এলাকা ঘুরে ময়নাগুড়িতে এসে জাতীয় সড়ক ধরে। জলপাইগুড়ি শহরের গোশালা মোড়ে গত জানুয়ারি থেকে লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেই তল্লাশি ফাঁকি দিতে পাচারকারীরা কিছু দূর অন্তর নম্বর প্লেট বদলে ফেলছে, বারবার মোবাইলের সিম বদলাচ্ছেন এজেন্টরা। কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয়বাবু বলেন, ‘‘গাড়ি এবং তার নম্বর জানিয়ে খবর আসে। হয়তো যে নম্বর বলা হয়েছিল তা অসমের। কিন্তু ধরার পরে দেখা গেল, সেই গাড়িতে তখন কর্নাটকের নম্বর প্লেট লাগানো। এ সব ক্ষেত্রে গাড়িটিকে চিহ্নিত করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।’’
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, গাঁজার প্যাকেট নিয়ে যাওয়ার জন্য চালকদের হাতে পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। ছোট-বড় গাড়িতে প্রায় দিনই পাচার চলছে বলে পুলিশের দাবি। পাচার বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকার জোগান দিচ্ছে কে? ধৃতদের জেরা করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সব সংগঠনের মাথার ওপর পড়শি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হাতও দেখছেন তদন্তকারীরা।
(ত্রিপুরা থেকে তথ্য সহায়তায় বাপি রায়চৌধুরী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy