Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অসমাপ্ত মঞ্চ নিয়ে রাজনীতির বিতণ্ডা

গত দেড় দশকে রায়গঞ্জ শহরে সরকারি উদ্যোগে নতুন কোনও অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি হয়নি। এক যুগেরও বেশি সময় আগে রায়গঞ্জে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত সেই কাজও শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শহরে অনুষ্ঠান মঞ্চের অভাব ও একাধিক অনুষ্ঠান মঞ্চের পরিকাঠামো বেহাল হয়ে পড়ায় শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে রবীন্দ্র ভবন তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে রবীন্দ্র ভবন তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

গত দেড় দশকে রায়গঞ্জ শহরে সরকারি উদ্যোগে নতুন কোনও অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি হয়নি। এক যুগেরও বেশি সময় আগে রায়গঞ্জে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত সেই কাজও শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শহরে অনুষ্ঠান মঞ্চের অভাব ও একাধিক অনুষ্ঠান মঞ্চের পরিকাঠামো বেহাল হয়ে পড়ায় শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মঞ্চের অভাবে শহরে নাট্য ও সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসার ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রায়গঞ্জ শহরে মোট তিনটি অনুষ্ঠান মঞ্চ রয়েছে। তার মধ্যে একটি রায়গঞ্জ পুরসভা পরিচালিত বিধানমঞ্চ। বাকি দু’টি অনুষ্ঠান মঞ্চের নাম রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট মঞ্চ ও ছন্দম মঞ্চ।

রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শহরে অনুষ্ঠান মঞ্চের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি একাধিক বেসরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চের পরিকাঠামো বেহাল হয়ে রয়েছে। সেই কারণে শহরের নাচ, গান, নাটক করার জন্য কোনও সাংস্কৃতিক সংগঠন আবেদন করলে পুরসভা বিধানমঞ্চের ভাড়ার উপর বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে দেয়।’’ একেই রায়গঞ্জ শহরে অনুষ্ঠান মঞ্চের অভাব। তার উপর ছন্দম ও ইনস্টিটিউট মঞ্চের পরিকাঠামোর অভাবে যখন নাটক, নাচ ও গান সহ নানা ধরণের সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসার ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠছে, তখন রায়গঞ্জে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করতে কেনও দীর্ঘ দিন ধরে সরকারি টালবাহানা চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য, সরকারি উদ্যোগে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর একযুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রায়গঞ্জে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ রয়েছে শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী বাসিন্দাদের। একযুগেরও বেশি সময় আগে নির্মাণকাজ শুরু হলেও রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দল অবশ্য পরস্পরকে দুষতে কোনও খামতি রাখছে না।

রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক বিপুলকুমার কুমার জানান, ২০১২ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর নির্মীয়মাণ রবীন্দ্রভবনটি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০০১ সালে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে রায়গঞ্জের রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শুরু করে। দু’ বছর কাজ চলার পর টাকার অভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়! এরপর রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করতে রায়গঞ্জের তত্কালীন সিপিএম সাংসদ সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ২০০৬ সালে তত্কালীন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি তাঁদের সাংসদ তহবিলের মোট ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন! রাজ্যসভার সিপিএমের তত্কালীন এক সাংসদও তাঁর তহবিল ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন! ওই টাকায় ফের রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও ২০০৮ সালে টাকার অভাবে ফের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে নির্মীয়মাণ রবীন্দ্রভবনটি অধিগ্রহণ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর! ২০১৩ সালের শেষের দিকে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর আরও ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। এখনও পর্যন্ত নির্মীয়মাণ রবীন্দ্রভবনের সাউন্ডসিস্টেম, বিদ্যুদয়ণ, শৌচাগার, দর্শকাসন, পানীয় জল, মঞ্চ ও অগ্নি নির্বাপণের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়নি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বসানোর কাজও থমকে রয়েছে।

রায়গঞ্জ কালচারাল ফোরামের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, রায়গঞ্জ শহরে অনুষ্ঠান মঞ্চের অভাব ও একধিক অনুষ্ঠান মঞ্চের পরিকাঠামো বেহাল থাকায় শহরের নাটক, নাচ ও গান সহ নানা ধরণের সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসার ব্যহত হচ্ছে! রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হলে এই সমস্যা হতো না। গত একযুগ ধরে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করতে কেনও সরকারি টালবাহানা চলছে সেটা সংস্কৃতিপ্রেমী বাসিন্দাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের অভিযোগ, প্রথমে বামফ্রন্ট ও পরে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতা, গাফিলতি ও টালবাহানার জেরে গত ১৪ বছরেও রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হল না! ফলে রায়গঞ্জের সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাঁর দাবি, শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী প্রসারের স্বার্থে পুরসভার তরফে দুবছর আগে বিধানমঞ্চের আধুনিকীকরণের কাজ শেষ করা হয়েছে! পুরসভা ও তাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকায় শহরে বন্দর, বীরণগর, দেবীনগর সহ একাধিক ওয়ার্ডে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের দাবি, বাম আমলে টাকার অভাব ও প্রশাসনের একাংশের গাফিলতির জেরে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ না হওয়া জেলাবাসীর কাছে অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তাই জেলার সুষ্ঠ সংস্কৃতি প্রসারের স্বার্থে দ্রুত রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হওয়া উচিত।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সদিচ্ছা থাকলে একদশক আগেই রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যেত। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের অভিযোগ, পূর্বতণ বামফ্রন্ট সরকার কোনও আর্থিক পরিকল্পনা না করে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শুরু করেছিল। সেই কারণে, নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার একযুগ পেরিয়ে গেলেও রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ হয়নি। পাশাপাশি, গত এক দশকে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরাও রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হননি। তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর আগামী আট মাসের মধ্যে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে।

শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন অবশ্য রাজনৈতিক চাপানউতোরে জড়াতে রাজি নন! তাঁদের দাবি, অবিলম্বে রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ শেষ করা হোক।

ছন্দম নাট্য সংস্থার নাট্য নির্দেশক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়গঞ্জ সঙ্গীত সদনের কর্ণধার দীপেন্দু কর্মকার ও রায়গঞ্জের ‘স্মারণী একটি নাটকের দল’ সংগঠনের সম্পাদক অরুপ ধর বলেন, রাজ্য সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আবেদন অতীতের কথা ভুলে বর্তমানে শহরের নাচ, গান, নাটক সহ সব ধরণের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত রবীন্দ্রভবন তৈরির কাজ যাতে শেষ হয়, আপনারা দয়া করে সেই ব্যবস্থা করুন।

অন্য বিষয়গুলি:

Raiganj cultural hall mohit sengupta Itahar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE