Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জলকর তুলে, বেতন বাড়িয়ে বিদায় কৃষ্ণেন্দুর

নাগরিকদের উপরে পুরসভা জলকর চাপাক, চান না দলনেত্রী। তা সত্ত্বেও এত দিন ইংরেজবাজার পুরসভায় জলকর নেওয়া হতো। সেটা কী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কী সাধারণ বাড়ি— সব ক্ষেত্রেই। সেই বাবদ আয়ও হতো মাসে ৮ লক্ষ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

নাগরিকদের উপরে পুরসভা জলকর চাপাক, চান না দলনেত্রী। তা সত্ত্বেও এত দিন ইংরেজবাজার পুরসভায় জলকর নেওয়া হতো। সেটা কী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কী সাধারণ বাড়ি— সব ক্ষেত্রেই। সেই বাবদ আয়ও হতো মাসে ৮ লক্ষ টাকা। পুরসভার চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার আগে সেই কর তুলে দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করালেন কৃষ্ণেন্দুনায়ারণ চৌধুরী।

এখানেই শেষ নয়। এত দিন পুরসভায় যে অস্থায়ী কর্মীরা ছিলেন, তাঁদেরও স্থায়ী করে দিয়ে গেলেন তিনি। সেখানে পুরসভার খরচ বাড়ল মাসে ৩৬ লক্ষেরও বেশি। অর্থাৎ, দুইয়ে মিলিয়ে পুরসভার মোট অর্থক্ষয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল মাসে কমপক্ষে ৪৪ লক্ষ টাকা। বছরে পাঁচ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার মতো।

যাওয়ার আগে নতুন বোর্ডের জন্য এটাই কৃষ্ণেন্দুর ‘উপহার’।

তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, আয় কমিয়ে, খরচ বাড়িয়ে পদ ছাড়লেন কৃষ্ণেন্দু। এবং একই সঙ্গে তাঁরা কৃষ্ণেন্দুর চালের তারিফ না করেও পারছেন না। তৃণমূল নেতাদের কথায়, ইংরেজবাজারের প্রাক্তন বিধায়কের সব থেকে বড় চাল জলকর তুলে দেওয়া। যুক্তি হিসেবে কৃষ্ণেন্দু বলেছেন, আগে পুরসভার আর্থিক পরিস্থিতি ভাল ছিল না। তাই এই কর নেওয়া হতো। কিন্তু এখন যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে এই করটি তুলে দেওয়াই যায়।

তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, উনি ভাল ভাবেই জানেন, নেত্রী জলকরের উপরে কতটা চটা। সেই বিরোধী আসনে থাকার সময় থেকে এই করের বিরোধী মমতা। এমনকী, কলকাতার মেয়র থাকাকালীন জলকর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেত্রীর কোপে পড়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক সংস্থা উন্নয়নের জন্য যখন আর্থিক সাহায্য করে, তার অন্যতম শর্ত হিসেবে জলকর বসানোর কথাও বলে তারা। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই মমতা তা মানতে চাননি।

ইংরেজবাজারের তৃণমূল নেতাদেরও বক্তব্য, এই যে কৃষ্ণেন্দু জলকর তুলে দিলেন, পরের বোর্ডের পক্ষে ইচ্ছে থাকলেও তা ফিরিয়ে আনা তাই খুবই কঠিন। এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘নতুন দায়িত্ব নিয়ে কে আর নেত্রীর কোপের মুখে পড়তে চাইবে বলুন!’’ এর সঙ্গে পুরসভার চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ১২০০ অস্থায়ী কর্মীর বেতন এক ধাক্কায় দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু। এঁরা এখন বেতন পান কেউ আড়াই, কেউ তিন হাজার টাকা। সেই বেতন বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে মাসে অন্তত ৩৬ লক্ষ টাকা খরচ বাড়ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিদায়ী চেয়ারম্যান কি এ সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? কৃষ্ণেন্দু বলেছেন, ‘‘বুধবার বিকেল ৩টে ২১ মিনিটে আমাদের দলের জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ইস্তফা দেওয়ার অনুরোধ মেসেজ পাঠান। তার আগে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও কথা হয়। কিন্তু পুরসভায় বোর্ড মিটিং ছিল বেলা দুটোয়। সেখানে ২৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন হাজির ছিলেন। তখনই এই দুই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী দুলাল সরকার বলেন, ‘‘বোর্ড মিটিংতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা পরের মাসিক বোর্ড মিটিংয়ে রিড অ্যান্ড কমফার্ম করতে হয়। ফলে এই সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত তা বলা ঠিক নয়।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘কে কী করল জানি না। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীতে কাজ হবে।’’

কিন্তু চাইলেও এই দুই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন। প্রথমটির বেলায় খোদ নেত্রী খেপে যেতে পারেন। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কর্মী অসন্তোষ বাড়ার প্রবল আশঙ্কা। তাঁরা সকলে মিলে যদি ধর্মঘটে যান, তা হলে পুরসভার কাজই বন্ধ হয়ে যাবে।

তাই কৃষ্ণেন্দুর এই দুই ‘শাঁখের করাত’ নিয়ে কী করা হবে, সেটা ভাবতেই এখন গালে হাত সকলের।

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnendu Narayan Chowdhury water tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE