আসিফের বন্ধু সাব্বিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার সেই মার্বেল এবং প্লাইউড। নিজস্ব চিত্র
ঠান্ডা মাথায় পরিবারের সকলকে সরিয়ে দিয়েছিল মহম্মদ আসিফ। সে জন্য অন্তত ২ বছর ধরে গোটা অপরাধের পরিকল্পনা করেছিল সে। সেই কাজে ব্যবহার করেছিল বন্ধুদেরও। মালদহের কালিয়াচকের পুরনো ১৬ মাইল এলাকার হাড় হিম করা ওই ঘটনায় আসিফ এবং তার ২ বন্ধুকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরার পর এমনই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই ওই কাণ্ডের তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-কে। পাশাপাশি তদন্ত করছে এসটিএফ-ও।
সোমবার আসিফের বন্ধু সাব্বির আলির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু মার্বল এবং প্লাইউড উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আসিফ জেরায় জানিয়েছে, সে এই মার্বল এবং প্লাইউড ব্যবহার করে ৫টি কফিনের আকারের প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছিল। তার মধ্যে এক এক জনের দেহ রেখে জল দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল। যতটা বেঁচে গিয়েছিল তা সে রেখে দিয়েছিল সাব্বিরের বাড়িতে। সাব্বিরের মা পলি বিবির দাবি, ‘‘তখন মার্বল এবং প্লাইউড রাখতে আপত্তি করেছিলাম। আসিফ বলেছিল, আমরা এখান থেকে চলে যাব। আপনারা ওগুলো রেখে দিন।’’ তদন্তকারীদের মতে, আসিফ যে রহস্যময় বাড়ি তৈরি করেছিল তা এলাকার কোনও রাজমিস্ত্রি করেননি। কোন রাজমিস্ত্রি ওই নির্মাণ করেছিলেন তার খোঁজ চলছে।
সাব্বির ছাড়াও আর এক বন্ধু মাহরুফ আলিকেও ব্যবহার করেছিল আসিফ। তাকে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আসিফ। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। সোমবার আসিফ, সাব্বির এবং মাহরুফকে জেরা করে বহু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার আসিফের দাদা আরিফ মহম্মদের জবানবন্দি নেওয়া হবে আদালতে।
তদন্তকারীদের ধারণা, দেহগুলি পচে যাতে দুর্গন্ধ না বার হয় সে জন্য বালি এবং মাটি ব্যবহার করা হয়েছিল। যে কারণে ৪ মাস পরেও দেহগুলিতে তেমন পচন ধরেনি। এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পায়নি পুলিশ। তবে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করছেন। মৃতদের কী খাওয়ানো হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বছর উনিশের তরুণ আসিফের অপরাধমনস্কতা চমকে দিয়েছে সকলকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা আধিকারিক বলছেন, ‘‘আসিফ এমন ভাব করছে, যেন ওর কিছুই হয়নি। ও এখনও ভাবছে ওর লক্ষ্যপূরণ হবে। আগের মতো এ বারও পুলিশের হাত থেকে বার হয়ে যেতে পারবে। তবে ও এতটাই পাকা মাথার যে আমাদের পর্যন্ত ল্যাজেগোবরে করে দিচ্ছে।’’
তদন্তকারীদের মত, আসিফকে বাড়ির সকলে খুব ভয় করত। তার অনুমতি ছাড়া পরিবারের সদস্যরা আশপাশের কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। তদন্তে নেমে তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, আসিফের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখা গিয়েছে গত বছর দুয়েক ধরে। পাড়াতে নিজের ‘সুপার হিউমান’ ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল আসিফ। এ ক্ষেত্রে তার পরিবারেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তার দাদা আরিফ জানিয়েছে, ভাই এমনও গুজব রটিয়েছিল যে তার হ্যাকিং করার ক্ষমতার মাধ্যমে আকাশ থেকে হেলিকপটার নামিয়ে আনতে পারে, এমনকি বিমান দুর্ঘটনাও ঘটাতে পারে। এই কারণে স্থানীয় বাসিন্দারাও আসিফকে সমীহ করত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গত মার্চ মাসেই হ্যাকার সন্দেহে কালিয়াচক থানার পুলিশ ধরেছিল আসিফকে। সেই সময় আসিফের মূল বাড়িতে তল্লাশি করেন সাইবার সেলের আধিকারিকরা। কিন্তু সেই সময় সুড়ঙ্গটা তাঁদের নজরে আসেনি। আসিফ সেই সময় সাইবার সেলের তদন্তকারী আধিকারিকদের ফোন পর্যন্ত হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল বলেও প্রমাণ মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy