জ্বলছে গাড়ি। রবিবার জয়গাঁ থানার সামনে।
এক ব্যবসায়ীকে খুনের পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারত-ভুটান সীমান্ত শহর জয়গা।ঁ রবিবার সকালে উত্তেজিত জনতা জয়গাঁ থানা চত্বরে ঢুকে পুলিশের জিপ-সহ দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে। থানা চত্বরেই রাখা একটি স্কুল বাস-সহ তিনটি গাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেয় তারা। জনতার ছোড়া ইটের আঘাতে দু’জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়। কাঁদানে গ্যাসের দু’রাউন্ড সেলও ফাটানো হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আলিপুরদুয়ার থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ কর্তারা। এলাকায় টহল শুরু করে আধাসামরিক বাহিনী। ভাঙচুরের ঘটনায় ১০-১২ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় দুষ্কৃতী উপদ্রব বেড়েছে। শনিবার রাতে স্থানীয় দাড়াগাঁওয়ের বাসিন্দা রাজকুমার পান্ডেকে (৫০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করার পরেই জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাঁদের দাবি, রাজকুমারবাবুকে খুনে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া জানান, রাজকুমারবাবুকে খুনের খবর পাওয়া পরে রাত থেকেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, “এ দিন সকালে উত্তেজিত জনতা থানা চত্বরে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে দু’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।” খুনের ঘটনাটি নিয়ে বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে স্নিফার ডগ আনা হয়েছে। তবে খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে রাজকুমারবাবু বাড়ি ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের আক্রমণে খুন হন। তাঁর দেহটি ঝর্না বস্তি লাগোয়া স্থানীয় একটি ঝোরাতে পাওয়া যায়। মৃতের গলায়, দু’হাতে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। সকালে ঘটনাটি জানাজানি হতেই বেলা দশটা থেকে এলাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় বহু দোকান। সকাল ১১টা নাগাদ ভিড় জমতে থাকে জয়গাঁ থানার সামনে। বাসিন্দারা দাবি তোলেন, মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর আগে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। বেলা ১২টা নাগাদ থানায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয় কিছু লোক। বিক্ষোভকারীদের একাংশ থানা লক্ষ করে ইট ও কাচের বোতল ছোড়ে বলেও অভিযোগ। ঘটনায় দু’জন পুলিশ আহত হন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
ব্যবসায়ী খুনের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রবিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ।
থানা চত্বরেই ক্ষিপ্ত জনতা জ্বালিয়ে দেয় গাড়ি। ঘটনার পরে সুনসান এলাকায় টহল এসএসবি-র জওয়ানদের।
রাজকুমারবাবুর মেয়ে রানি পাণ্ডে জানান, তাঁর বাবার ঠিকাদারি ব্যবসা ছিল। শনিবার বিকেল পাঁচটার সময় বাড়ি থেকে তিনি জয়গাঁ বাজারে তাঁর অফিসে যান। রানি জানান, তাঁর বাবা প্রতি দিন রাত দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু সেই রাতে দেরি হওয়ায় রাত দশটা ৩৫ নাগাদ তিনি বাবাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, “বাবা তখন বলেছিলেন, রাস্তায় আছেন। তার কিছু ক্ষণ পরে মোবাইলের সংযোগ কেটে যায়। পরে আর ফোন পাওয়া যাচ্ছিল না।” সে দিন রাজকুমারবাবু রাত আটটা নাগাদ দোকান বন্ধ করে তিন বন্ধুর সঙ্গে একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেন রানি। এই তিন জনের মধ্যে এক জন রাজকুমারবাবুর ব্যবসার অংশীদার। রানি বলেন, “সব কথা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছি। বাবার সঙ্গে থাকা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়নি।”
রাজকুমারবাবুর বন্ধু ওমপ্রকাশ সিংহ জানান, ঝর্না বস্তি লাগোয়া এলাকায় এর আগেও বহু বার ছিনতাই ও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “বারবার পুলিশকে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় নজরদারি চালাতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” জয়গাঁ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রামাশঙ্কর গুপ্ত বলেন, “এলাকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বেশ কয়েক দিন ধরেই এখানে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। কিন্তু পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। এ বার এক জন ব্যবসায়ীকে খুন পর্যন্ত করা হল। তবু পুলিশের টনক নড়ছে না। সে কারণেই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।” তিনি জানান, জয়গাঁয় অনেক ব্যবসায়ী থাকেন। ভুটানের দোরগোড়ার এই শহরে তাই পুলিশের উচিত বরং বেশি সক্রিয় থাকা।
কালচিনির বিধায়ক তথা জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান উইলসন চম্প্রামারি অবশ্য বলেন, “খুনের ঘটনায় স্থানীয় জনতা শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। তবে কিছু দুষ্কৃতী গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় ঘটনাটি অন্য মোড় নেয়।” যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের অন্যতম এলাকার বসিন্দা মনোজ পাসোয়ান ও ননজি তিওয়ারি জানান, তাঁরা জয়গাঁ বাজার এলাকায় নিজেদের দোকানের সামনে বসেছিলেন। আচমকা পুলিশ এসে লাঠি চালায়। তার প্রতিবাদ করলে জোর করে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ছবি দু’টি তুলেছেন নারায়ণ দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy