গতিপথ ছেড়ে তিস্তা নদী ঠিক কোথায় এবং কতটা দূরে সরে বইছে, তা দেখতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’-র অধীনস্থ একটি সংস্থার সাহায্য নিতে চলেছে সেচ দফতর। ইসরোর সংস্থা ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে সেচ দফতরের। পাঠানো হয়েছে চিঠিও। সূত্রের খবর, ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের’ সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হলেই একটি চুক্তি হবে। তার পরেই তিস্তা নদীর বদলে যাওয়া গতিপথ খুঁটিয়ে দেখবে ইসরো-র একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ।
তিস্তা নদীর গতিপথ যে বদলেছে, সেই তথ্য সেচ দফতরের হাতে এসেছিল উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমেই। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদ ভেঙে তিস্তায় হড়পা বান নামে। তার জেরে সমতলে একাধিক বার গতিপথ বদলে যায় সিকিম-উত্তরবঙ্গের ‘জীবনরেখা’ বলে পরিচিত তিস্তা নদীর। গত দু’বছর ধরে তিস্তা নদী নিয়ে একাধিক সমীক্ষা করেছে সেচ দফতর। জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক নদী বিষয়ক সংস্থাও তিস্তার গতিপথ নিয়ে সমীক্ষা করেছে।
সেচ দফতরের দাবি, যে সমীক্ষাই হয়েছে, তার মূল ভিত্তি ছিল চোখে দেখা। নিবিড় ভাবে নদীর গতিপথ বদল নিয়ে সমীক্ষা হয়নি। সে কারণেই সেচ দফতর ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’কে দিয়ে তিস্তা নদীর সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরোর অধীনস্থ ওই সংস্থা উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে নানা রিপোর্ট তৈরি করে এবং নিজেদের প্রয়োজনে উপগ্রহের মাধ্যমে নতুন ছবি তোলায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য সংস্থার বিশেষ ইউনিট মেঘালয়ে অবস্থিত।
সেচ দফতরের দাবি, ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের’ সমীক্ষায় উপগ্রহের শক্তিশালী এবং স্পষ্ট ছবি মিলবে। সেই ছবি বিশদে পরীক্ষা করে কোথায় নদীর গতিপথ কতটা বদল হয়েছে, তা-ও জানিয়ে ওই দেবে সংস্থা। শুধু তাই নয়, তিস্তা নদী ভবিষ্যতে কোথায়, কতটা, কোন দিকে সরতে পারে— সেই প্রবণতার কথাও জানিয়ে দিতে পারবে সংস্থাটি। তার ফলে এক দিকে যেমন বন্যা প্রতিরোধের কাজে সুবিধা হবে, সেই সঙ্গে তিস্তার দুই তীরে প্রতি বছর ফসলি জমির বন্যার জলে ক্ষতি হওয়ার হাত থেকেও বাঁচানো যাবে। সমীক্ষার কাজে খুব বেশি অর্থও মহাকাশ গবেষণার এই সংস্থা নেয় না বলে দাবি সেচ দফতরের। দফতর সূত্রে খবর, কোটি টাকার কম খরচেই বিশদে সমীক্ষা হয়ে যাবে।
সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের মেঘালয়ের অফিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের নানা কাজ করে দেয়। আমাদের কাজও করে দেবে। তিস্তা নদীর গতিপথ বদল নিয়ে তা হলে পূর্ণাঙ্গ এবং নিবিড় সমীক্ষা হবে। প্রচুর তথ্যও আমরা পাব।” তিস্তা নদীর গতিপথ বদলের জেরে সেবকের কাছে একটি গোটা গ্রাম কার্যত নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিস্তারিত সমীক্ষা হলে নদীর কোন কোন বাঁকে বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে, সেই প্রবণতাও জানতে পারবে সেচ দফতর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)