Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বাবার সই না থাকায় বাদ কন্যাশ্রীতে

পাশের স্কুলে ভর্তি হল সেই নাবালিকা

বাবার সই না থাকায় কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম তোলেনি স্কুল। পিতৃপরিচয় নিয়ে আদালতে মামলা চলায় ‘অবৈধ সন্তান’ অপবাদও শুনতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। নালিশ হওয়ায় এ ব্যাপারে হাইকোর্ট হলফনামা তলব করেছিল প্রশাসনের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

বাবার সই না থাকায় কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম তোলেনি স্কুল। পিতৃপরিচয় নিয়ে আদালতে মামলা চলায় ‘অবৈধ সন্তান’ অপবাদও শুনতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। নালিশ হওয়ায় এ ব্যাপারে হাইকোর্ট হলফনামা তলব করেছিল প্রশাসনের কাছে।

নড়েচড়ে বসে স্কুল থেকে প্রশাসন। বিডিও অফিস-থানা থেকে আধিকারিক-অফিসাররা ছাত্রীর বাড়িতে হাজির হয়। শুরু হয় কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম তোলার প্রস্তুতি। তখনই বেঁকে বসে বছর পনোরোর মেয়েটি। আধিকারিকদের মুখের ওপর জানিয়ে দেয়, ‘‘অনেক হয়েছে। ওই স্কুলে আর যাব না। ওরা এতদিন আমার কোনও কথা শোনেনি।’’

ছাত্রী স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিলে হাইকোর্টের চরম ভর্ৎসন্যা শুনতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয় প্রশাসনের অন্দরে। কিন্তু ছাত্রীটি কন্যাশ্রীর ফর্মেও আর সই করতে রাজি নয়। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও ছাত্রীর জেদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি প্রশাসনের কর্তারাও। অবশেষে পাশের অন্য এক স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে তাকে। গত মঙ্গলবার থেকে নতুন স্কুলে যেতে শুরু করেছে সে। কেন যায়নি পুরোনো স্কুলে? ছাত্রীর জবাব, ‘‘বাবার সই না থাকায় অনেক গঞ্জনাও শুনেছি স্কুলে।’’

অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর নাম রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প পাওয়ার তালিকায় তোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছিল বেলাকোবা গার্লস হাইস্কুলের। কারণ হিসেবে স্কুলের তরফে জানানো হয়েছিল প্রকল্পের ফর্মে ছাত্রীর বাবার সই নেই। বছর খানেক আগে স্কুল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে ফর্মের পেছনে লেখা নিয়মাবলি দেখিয়ে পাল্টা যুক্তি দেয় ছাত্রী। তার পিতৃপরিচয় নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। জন্মের পরে মায়ের লড়াইতে সামিল হয়েছে মেয়েও।

ছাত্রীর কথায়, ‘‘বাবার পরিচয় আদায় করতেই তো মামলা চলছে। তাই সই পাব কী করে। নিয়ম আছে মায়ের সই থাকলেও কন্যাশ্রী পাওয়া যায়। কিন্তু স্কুল শুনল না। উল্টে আমাকে অনেক কথা শোনালো।’’

জানুয়ারি মাসে জলপাইগুড়ি সহ তিন জেলার একাধিক শিশুরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে নালিশ করেছিল শিলিগুড়ি লিগাল এইড ফোরামের অমিত সরকার। সেই নালিশে উল্লেখ ছিল ছাত্রীর ঘটনাও। মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ সব ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেন। তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তখনই ওই ছাত্রী জানিয়ে দেয়, ‘‘ওই স্কুলে আর যাব না।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানসী ঠাকুর বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী নিয়ে একটি জটিলতা হয়েছিল ঠিকই। তবে ছাত্রীকে কোনও অপবাদ দেওয়া হয়নি। কোনও মানসিক অত্যাচারও হয়নি। তবে তো আগেই অভিযোগ করতে পারত।’’ রাজগঞ্জের বিডিও-এর হস্তক্ষেপে গত সোমবার ছাত্রীকে কেবল পাড়া হাইস্কুলে ছাত্রীকে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিশিরকুমার দে বলেন, ‘‘ঘটনা সব জানি। মেয়েটি আমাদের স্কুলেই পড়বে। ওর কোনও সমস্যা হবে না বলেই আশা করছি।’’

এ দিকে ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তও শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও।

অন্য বিষয়গুলি:

Infant Kanyashree Prakalpa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE