Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সংক্রান্তিতে ফেরেন কল্পনার রাজা

কোথাও মুখা খেল, ঘোড়া খেলা আবার কোথাও গম্ভীরা। কখনও কাগজের তৈরি রংবেরঙের ধোড়ার মধ্যে নিজেকে পুরে দেন শিল্পী। তারপরে ঢাকের বোলের সঙ্গে শুরু হয় নাচ। আবার কখনও মঙ্গলচণ্ডীর কাহিনির উপরে ভিত্তি করে লোকনাট্য।

উৎসব: বর্ষশেষে মুখা নাচের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

উৎসব: বর্ষশেষে মুখা নাচের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

অনিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

কোথাও মুখা খেল, ঘোড়া খেলা আবার কোথাও গম্ভীরা। কখনও কাগজের তৈরি রংবেরঙের ধোড়ার মধ্যে নিজেকে পুরে দেন শিল্পী। তারপরে ঢাকের বোলের সঙ্গে শুরু হয় নাচ। আবার কখনও মঙ্গলচণ্ডীর কাহিনির উপরে ভিত্তি করে লোকনাট্য। চৈত্র শেষে উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তে তাই ছোঁয়া লাগে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির।

তরাই অঞ্চলে খবর আদানপ্রদানের এক মাধ্যম ছিল ঘোড়া খেলা। রাজবংশী সমাজের জমিদার বা জোতদাররা ঘোড়ায় চড়ে পয়লা বৈশাখে প্রজাদের বাড়িতে যেতেন, খোঁজখবর নিতেন, কুশল বিনিময় করতেন। সেই ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে ধুলিয়া রাজার কথা। কাল্পনিক এই চরিত্র সে দিন সকলের বাড়িতে ঘোড়ায় চড়ে উপস্থিত হতেন। ঘোড়া খেলা সে ঐতিহ্যেরই অনুসারী, যা আজ লুপ্ত হতে বসেছে। ৪০ বছর ধরে ঘোড়া খেলা দেখাচ্ছেন যিনি সেই শিল্পী তারণ সিংহ এ বার আর খেলা দেখাবেন না। তাঁর কথায় এখন, ঘোড়া খেলার আকর্ষণই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীপককুমার রায়ের মতে, ‘‘সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ঐতিহ্য এই ঘোড়া খেলার বহুল প্রচলন ছিল তরাইয়ে, বিশেষত খড়িবাড়িতে। এখন এটি একেবারেই লুপ্ত হওয়ার পথে।’’

চৈত্র সংক্রান্তি এলে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে ঝুমুরকালীতলা, পাইকপাড়া, কালোমাটি, দক্ষিণ দিনাজপুরের চাকলা, শহিদপুর, যমুনার গ্রামে গ্রামে চলতে থাকে গমিরা বা মুখা খেল-এর আয়োজন। চামুণ্ডা ও কালীই থাকে কেন্দ্রে। কোথাও সংক্রান্তির দিন, কোথাও বা আগের দিন, গ্রামের থানে গমিরার ঘট বসে। অশুভ শক্তির বিনাশ ও ফালো ফসলের আশায় এই অঞ্চলের মানুষ মুখা নাচের আয়োজন করেন। পয়লা বৈশাখ সকালে পূজা প্রাঙ্গণে শুরু হয় মুখোশ পরে মুখা খেল। চণ্ডী, মশান কালী, নৃসিংহ, চামুণ্ডা, বুড়া-বুড়ি, বাঘ, হনুমান, শিবের মুখোশ বা মুখা থাকে। মঙ্গলচণ্ডীর কাহিনি-ভিত্তিক লোকনাট্যরূপ মুখা খেল বা মুখা নৃত্য।

অনেকে বিশ্বাস করেন, মুখা পরলে দেবতা ভর করেন। থাকে শকুনরূপী কালো রঙের দানবের মুখোশ। তির মেরে তাকে বধ করা হয়। শেষে ফুলেশ্বরী চামুণ্ডার (শোলার ফুল দিয়ে তৈরি এই মুখা ফুলের মতোই সুন্দর) মুখোশ পরে নৃত্য পরিবেশন করেন মূল সন্ন্যাসী। তিনি থানে মুখোশ বা মঞ্জুষ উৎসর্গ করেন।

কেউ বা ঘরে টাঙিয়ে রাখেন মঞ্জুষ। মঞ্জুষে শিব, চণ্ডী, গণেশ, কার্তিকের ছবি থাকে। এর পর থেকে সপ্তাহের শনি মঙ্গলবার গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় মুখা খেল অনুষ্ঠিত হয়, যা চলে শ্রাবণ সংক্রান্তি পর্যন্ত। মুখোশশিল্পী মধুমঙ্গল মালাকার জানান, ‘‘মুখা খেল-এর সেই ঐতিহ্য এখন ম্লান অনেকাংশেই।

(ক্রমশ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chaitra Sankranti Theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE