Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Elephant

হাতির ঘরে মদের কাচের বোতল, শাবকদের বিপদ বাড়ছে ডুয়ার্সে

রাস্তার ২ ধারে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে ঠান্ডা পানীয় থেকে মদের বোতল, নোংরা আবর্জনা প্লাস্টিক।

বিপন্ন বন্যপ্রাণ। নিজস্ব চিত্র।

বিপন্ন বন্যপ্রাণ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:৪১
Share: Save:

বন্যেরা বনে সুন্দর ঠিকই কিন্তু বন্যদের সুন্দর সেই বাসস্থানকে আজ আস্তাকুঁড়েতে পরিণত করে ফেলেছেন কিছু মানুষ। অরণ্যের বুক চিরে চলা রাস্তার ২ ধারে দেখা মিলছে মদের কাচের বোতল-সহ নানা আবর্জনা যা শাবক বা পূর্ণবয়স্ক হাতিদের কাছে প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনই ছবি উঠে এল ডুয়ার্স থেকে। পর্যাপ্ত বনকর্মীর অভাবে সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই পরিস্থিতি বলে দাবি করেছেন পরিবেশ কর্মীরা।

উত্তরবঙ্গের মধ্যে হাতিদের সংখ্যা সব থেকে বেশি ডুয়ার্সে। আর তার মধ্যে মোরাঘাট জঙ্গল হাতিদের সব চেয়ে প্রিয় আস্তানা। আর আজ সেই মোরাঘাট জঙ্গলই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে বন্য প্রাণীদের কাছে। এমনই অভিযোগ পরিবেশপ্রেমী থেকে সচেতন এলাকাবাসীদের।

মোরাঘাট জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে গয়েরকাটা-নাথুয়া রাজ্য সড়ক। রাস্তার ২ ধারে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে ঠান্ডা পানীয় থেকে মদের বোতল, নোংরা আবর্জনা প্লাস্টিক। আর তার পাশেই দেখা যাচ্ছে হাতির মল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে হাতিদের বিচরণক্ষেত্রে বা যাতায়াতের পথের মাঝেই এই আবর্জনা জমছে। কিন্তু দেওয়ার কেউ নেই।

জঙ্গলে রাস্তার ধারে কাচের বোতল। নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন রেঞ্জে প্রয়োজনের তুলনায় বনকর্মীর সংখ্যা অনেক কম। নাথুয়া এবং মোরাঘাট ২টি রেঞ্জের দায়িত্বই সামলাতে হচ্ছে মোরাঘাট রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রাজকুমার পালকে। এমনকি ২টি বিট সামলাতে হচ্ছে ১ জন বিট অফিসারকে। স্বাভাবিকভাবেই ২টি রেঞ্জের বনাঞ্চল পাহারা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ বনকর্মীর প্রয়োজন, তা নেই। তার উপর বনকর্মীদের বেশির ভাগ সময়টাই চলে যায় জঙ্গলের গাছ পাহারা দিতে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে বা দিনের বেলাতেও সুযোগ বুঝে মদ বা ঠান্ডা পানীয়র বোতল ফেলে রাখছে কিছু মানুষ।

ডুয়ার্সে হাতির করিডোরগুলিতে এক দিকে যেমন চা বাগানের কাঁটাতারের বেড়া বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তেমনই এই বিপজ্জনক আবর্জনাও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে হস্তি শাবকদের। হাতি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, “হাতির শাবকরা কিছু বোঝে না। তারা যে কোনও কিছুই তুলে মুখে নেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে গোটা বা ভাঙা কাচের বোতল তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই সমস্ত এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো উচিত। এবং দ্রুত এই সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে দিতে হবে।”

নেচার অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি (ন্যাস)-এর ওদলাবাড়ির কর্মকর্তা নফসর আলি বলেন, “নিয়োগ হচ্ছে না তাই জঙ্গলে পাহারা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বনকর্মী নেই। ফলে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে নজরদারিতে। তার উপর সাপ উদ্ধার বা লোকালয়ে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়লেও তাঁদের ছুটতে হচ্ছে। আবার জঙ্গলের গাছ পাহারাও রয়েছে। তাই বনকর্মীদের সংখ্যা না বাড়লে এই সমস্যার সমাধান হওয়া কঠিন। তবে বন দফরের উচিত নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইন মোতাবেক কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।”

বিপদ বাড়ছে শাবকদের। নিজস্ব চিত্র।

গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজকুমার দাবি করেছেন, ‘‘বনকর্মীরা নিয়মিত জঙ্গলে নজরদারি চালান। রাতের অন্ধকারে কেউ কিছু ফেলে গিয়ে থাকতে পারেন। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বন্যপ্রাণীদের জন্য কাচের বোতল বা প্লাস্টিক খুবই বিপজ্জনক। সাফাইয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Dooars
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy