ফাইল চিত্র।
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি চোরাশিকারিদের দল ডুয়ার্স ও মহানন্দা অভয়ারণ্যের চিতাবাঘ শিকারে যুক্ত।
এ যাবত পাকড়াও চোরাশিকারি দলের সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছেন, মূলত দু’টি উপায়ে কাজ হাসিলের চেষ্টা করে দলটি। প্রথমত, কোনও একটি সূত্র ধরে উত্তরবঙ্গের বনবস্তি, চা বাগানের মতো কোথাও নিয়মিত চিতাবাঘের হানার ঘটনা থাকলে সেখানে চুপিসাড়ে শিকারের ছক কষে তারা। সেই কাজে দু’এক জন স্থানীয়কেও কাজে লাগায়। চিতাবাঘের পায়ের ছাপ, আনাগোনার রাস্তা চিহ্নিত করে সেখানে বিষ মেশানো হাঁস-মুরগির দেহ ফেলে রাখে। চিতাবাঘ বিষক্রিয়ায় ঢলে পড়লে রাতারাতি চামড়া, নখ, দাঁত ও আরও কিছু দেহাংশ তুলে সরে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিষয়টি আঁচ করলেও পোষা হাঁস-মুরগি, ছাদল-শূয়োর বাঁচানোর তাগিদে মুখ বুঁজে থাকেন বলে তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের দাবি।
এ ছাড়া গুলি, তির চালানোয় সিদ্ধহস্ত কয়েকজন চোরাশিকারি। বন দফতরের একটি সূত্র অনুযায়ী, অসম, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের কয়েকজন মিলে একটি চোরাশিকারিদের দল রয়েছে। ওই দলটি প্রথমে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলের নানা অতিথি আবাসে পর্যটক সেজে ঘাঁটি গেড়ে নজরদারি চালায়। কোন এলাকায় জঙ্গলে নজরদারিতে অপেক্ষাকৃত বেশি ফাঁক রয়েছে, তা খুঁজে বার করে চলে যান।
দ্বিতীয় দফায় ওই বন লাগোয়া এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে চিতাবাঘের বিচরণের ম্যাপ তৈরি করতে পাঠানো হয় আরেকটি দলকে। তা হাতে পাওয়ার পরে তৃতীয় দফায় প্রশিক্ষিতরা বিষ মেশানো তির, বন্দুক নিয়ে হাজির হয়ে কাজ হাসিল করে সরে পড়ে।
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, নজরদারির জন্য সব বনাঞ্চলে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। উপরন্তু, ডিএফও-রা আগে প্রয়োজন মতো অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করে নজরদারি আঁটোসাটো করতে পারতেন। এখন ট্রেজারির অনুমোদন ছাড়া আগাম অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা যায় না। তাই ডিএফও-রা প্রয়োজন মতো জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি বাড়াতে পারছেন না।
সমস্যা রয়েছে চিতাবাঘের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত সম্পূর্ণ করে দোষীদের শাস্তির প্রক্রিয়া নিয়েও। কারণ, গত ৩ বছরে উত্তরবঙ্গের নানা এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া যে ১২টি চিতাবাঘের দেহাশ মিলেছে তার নমুনা কখনও দেহরাদূন, আবার কখনও কলকাতায় বেলগাছিয়ায় পাঠানো হয়েছে। ‘ভিসেরা’ রিপোর্ট এখনও উত্তরবঙ্গে পৌঁছয়নি। ফলে, তদন্তও অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে আছে। তাই কী ভাবে চিতাবাঘের মৃত্যু ঘটছে তা রহস্যই থেকে যাচ্ছে। ইদানীং, চিতাবাঘের দেহ উদ্ধার হলেই এলাকা দখল নিয়ে মারামারি, এমনকী, হাতি চিতাবাঘকে আছড়ে মেরেছে বলেও চাউর হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট না পেলে ওই তদন্ত সম্পূর্ণ হবে না। উত্তরবঙ্গের একজন শীর্ষ বনকর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ফরেনসিক পরীক্ষা করানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। সে জন্য ৪-৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হলেই কাজ চালানোর মতো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তা হলে রিপোর্টের জন্য বছরের পর বছর হাপিত্যেশ করে বসে তাকতে হবে না। দোষীদের চিহ্নিত করাও সহজ হবে।’’
কিন্তু, বনাঞ্চলে কর্মী নিয়োগ, ডিএফও-দের হাতে পুরানো ক্ষমতা ও বন্যপ্রাণের জন্য একটি হাসপাতাল, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি গড়ে তোলার কাজ কবে হবে সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy