মগ্ন: বই হাতে সৌরদীপ। পাশে ছোট ভাই শঙ্খদীপ। শুক্রবার, নিজের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
পড়ার আলাদা কোনও ঘর নেই। বাড়িতে শোওয়ার ঘরের পাশে একটি ছোট ঘরে খাট ও টেবিলের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পদার্থবিদ্যা, অঙ্ক, রসায়নের বইপত্র। কোনও বইয়ের ভিতরে রয়েছে জগদীশচন্দ্র বসুর ছবি, আবার কোনও বইয়ের ভিতরে রয়েছে মেঘনাদ সাহা, আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীর ছবি। এঁদের চিন্তাভাবনায় অনুপ্রাণিত সৌরদীপ দাস এখন রায়গঞ্জের অশোকপল্লির বাড়ি থেকে বিজ্ঞানের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। জয়েন্ট এন্ট্রান্সে প্রথম সৌরদীপ চলে যাবেন বেঙ্গালুরুর আইআইএসসি-তে। অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চ শিক্ষার দিকেই তাঁর নজর।
সৌরদীপ অবশ্য শুধু রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষায় প্রথমই নন, তিনি জেইই মেনসে ৯৯.৯৯% পেয়েছেন। কিশোর বৈজ্ঞানিক প্রোৎসাহন যোজনা বা কেভিপিওয়াই পরীক্ষা দিয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরুতে ভর্তি হতে হয়। সেই পরীক্ষাতেও তাঁর র্যা ঙ্ক ৪৮, তফসিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে দ্বিতীয়। বস্তুত, যে দেওঘর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তেন সৌরদীপ, সেটি সারা দেশে দশটি স্কুলের মধ্যে জায়গা পায় বলে দাবি অনেকেরই। সৌরদীপের এই ফলের কথা বলতে বলতে পড়শিদের এক জন বলেই ফেললেন, ‘‘ও যেন আমাদের কাছে অরূপরতন।
বাইশে শ্রাবণে রবি ঠাকুরের নাটকের নামে যাঁকে ডাকছেন কাছের মানুষরা, তিনি নিজেও রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত। বলেন, ‘‘প্রিয় গান আলাদা করে বলা মুশকিল। তবে ‘তুমি রবে নীরবে...’ মনে পড়ে গেল এক কথায়। আর কবিতায় ‘সোনার তরী’।’’ সৌরদীপ বলেন, “আমার স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রশিক্ষকদের সহযোগিতা এবং বাবা ও মায়ের অনুপ্রেরণা ছাড়া এই ফল করতে পারতাম না। এবারে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষনা করে ভবিষ্যতে একজন বিঞ্জানী হয়ে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ভাল কিছু আবিস্কার করতে চাই।”
সৌরদীপের বাবা শঙ্কর উত্তর দিনাজপুর জেলা কৃষি দফতরে সহ কৃষি অধিকর্তার (শস্য সুরক্ষা) পদে কর্মরত। মা ফুলটুসি গৃহবধূ। সৌরদীপের ভাই শঙ্খদীপ রায়গঞ্জের সারদা বিদ্যামন্দির ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি সংস্কারের অভাবে কিছুটা জীর্ণ। ফুলটুসি বলেন, “স্বামীর রোজগারের টাকায় দুই ছেলের পড়াশোনা আর সংসার চলে। ছেলেরা মানুষ হোক। তার পর ভাল করে বাড়ি তৈরি করা যাবে।”
সৌরদীপ ছোট থেকেই জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, আইনস্টাইনদের আদর্শ বলে মনে করেন। ছোট থেকে তিনি ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করতেন না। অবসর সময়ে সৌরদীপ রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে ভালবাসেন। এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান আইআইএসসি-তে ভর্তি হওয়া। তাঁর বাবা শঙ্কর বলেন, “করোনা আবহে চলতি বছরে আইআইএসসি-তে ভর্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে গিয়েছে। কবে তা চালু হয়, এখন সেই চিন্তায় রয়েছি।”
সৌরদীপের কক্ষপথ
• সৌরদীপ দাস
• পড়তেন: দেওঘরের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠে (সিবিএসই)
• পড়তে যাবেন: আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে (আগেই সুযোগ পেয়েছেন)
• লক্ষ্য: অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যায় গবেষণা
• আগ্রহ: বিজ্ঞানীদের জীবন পড়া
• বইখাতার মধ্যে: জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, আইনস্টাইনের ছবি
• চান: দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আবিষ্কার করতে
• প্রিয় রবীন্দ্র কবিতা: সোনার তরী
• প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত: তুমি রবে নীরবে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy