গভীর রাতে রিসর্টের লোহার দরজা খুলে গেল। বাইকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন এক আগুন্তুক। শীতের রাতে উঠোনে কাঠ জ্বালিয়ে ওম নিচ্ছিলেন দু’জন। তাঁদের কাছে এসে আগুন্তুক বললেন, “কাম হো গ্যায়া, সাব!” বলেই বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে চলে গেলেন আগুন্তুক। আগুনের ধারে বসে থাকা একজন ঘড়ি দেখে হিসেব করলেন সড়কপথে গভীর রাতে নাগরাকাটা থেকে পাক্কা এক ঘণ্টা দশ মিনিট লেগেছে। গরুমারার গন্ডারের খড়গ লোপাট কাণ্ডের তদন্তে আসা গোয়েন্দাদের দল এক গভীর রাতে স্থানীয় বনবস্তির কয়েকজন বাসিন্দাকে গাড়িতে বামনডাঙা থেকে চামুর্চি পাঠিয়ে সময় মেপেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেই দলের পৌঁছে যাওয়ার খবর নিয়েই রিসর্টে ঢুকেছিলেন বনবস্তির এক বাসিন্দা।
তদন্তকারীদের ধারণা যে রাতে গন্ডার খুন করা হয়েছিল, সে রাতেই বানারহাট-চামুর্চি হয়ে ভূটান লাগোয়া একটি এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল খড়গটিকে। সেখান থেকে সেই খড়গ অসমে পৌঁছেছে বলে দাবি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, গভীর রাতে গন্ডারের খড়গ পাচারের কাজ করেছিল তারাই, যারা এই রাস্তা হাতের তালুর মতো চেনে।
নাগরাকাটা-বানারহাট-চামুর্চি এই করিডর পুলিশের কাছে ‘চন্দন রুট’ নামে পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশ-ঝাড়খন্ড থেকে ট্রাকে, ছোটগাড়িতে চন্দনকাঠ এসে আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন চা বাগান লাগোয়া এলাকায় জড়ো হয় বলে অভিযোগ। বান্দাপানি, ঢেকলাপাড়া, নিউ ডুয়ার্স-সহ পশ্চিম সাঁতালিতে একাধিকবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছোট, বড় টুকরোয় চন্দনকাঠ উদ্ধার করেছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের গোয়েন্দাদের দাবি, বারোমাস রক্তচন্দন পাচারের পথ ডুয়ার্সের এই জায়গাগুলি। খড়গও সেই পথে যাওয়াতেই, প্রশ্ন উঠেছে চোরাশিকারীরা তবে কি চন্দন মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে?
বন দফতরের কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। বনমন্ত্রী বিনয় বর্মণ দাবি করেছেন, যে বা যাঁরাই পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকুন তদন্তে সবই উঠে আসবে। কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি বলেন, ‘‘সেই সময় চন্দনকাঠ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ উঠে থাকে সবই ভিত্তিহীন। কাঠ পাচার রুখতে পুলিশ-প্রশাসন সব সময় সক্রিয়।’’
এ দিকে শুক্রবার গরুমারায় গন্ডার নিধনের তদন্তে জলঢাকা নদীর চর পরিদর্শন করলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ। বন দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে এ দিন বৈঠকও করেন তিনি। মেদলা ওয়াচটাওয়ারের অদূরে জলঢাকা নদীর চর থেকেই গন্ডারটির দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
বনমন্ত্রী বিনয় বর্মণ এ দিন বলেন, ‘‘প্রধান মুখ্য বনপাল ওই জায়গা পরিদর্শন করে গোটা ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট আমাকে দেবেন।’’ গন্ডারটিকে কী ভাবে মারা হল, কারা মারল, সে বিষয়ে বন দফতর ও পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন রবিকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy