মাত্র মাস খানেক আগেও ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরবেন শুনলে খুশি উপছে পড়ত। প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জে নিজেদের ভিটে ছেড়ে যাঁরা সংসারের সুরাহার জন্য বিভুঁইতে পড়ে থাকেন, তাঁদের অপেক্ষায় থাকতেন আত্মীয় স্বজনেরা। এখন পরিস্থিতি উল্টো। ঘরের ছেলে ফিরছেন শুনলে বিষাদই গ্রাস করছে সংসারকে। বিভিন্ন জায়গায় তারই খোঁজ আনন্দবাজারের।
খালি হাতে বাড়ি ফেরা
রায়গঞ্জ
সাহজাহান আলি।
বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের মোড়লটুলি এলাকার বাসিন্দা সাহজাহান আলি গত ১৫ বছর ধরে দিল্লির রুজরি গার্ডেন এলাকার একটি পোশাক তৈরির কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করতেন। নোট বাতিলের জেরে গত ১৫ নভেম্বর থেকে তাঁর দৈনিক মজুরি বন্ধ করে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে ২২ নভেম্বর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর দাবি, দৈনিক ২৬৭ টাকা করে মজুরি পেতেন। কারখানায় ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। প্রতিদিন কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দিতেন। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি দিন মজুরির অত টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারছিলেন না। তাই সমস্ত শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বন্ধ হয়ে যায়।
কেউ ফিরবেন, কেউ ফিরেছেন
কোচবিহার
নজরুল রহমান।
বছর তিনেক আগে দু’চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন দুই বন্ধু নজরুল রহমান। তাঁদের রোজগারের টাকায় সংসার ঘুরেও দাঁড়াচ্ছিল। নোট বাতিলের ধাক্কায় এখন তামিলনাড়ুর একটি মোটরবাইক কারখানা থেকে কাজ হারিয়ে দুই বন্ধুই এখন তুফানগঞ্জ মহকুমার প্রত্যন্ত বাঁশরাজা গ্রামে ফিরেছেন। গোটা এলাকায় শতাধিক পরিবারে এক অবস্থা। কেউ ফিরেছেন, কেউ ফিরবেন। নজরুলের কারও পরিবারের আর্থিক অবস্থাই ভাল নয়। বিঘে খানেক জমি, বাবার দিনমজুরিতে বরাবর টানাটানির সংসার। শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আনন্দ দাস বলেন, “অন্তত একশো জন গ্রামে ফিরে এসেছেন। নোট বাতিলের প্রভাব এতটা মারাত্মক বাইরে থেকে কেউ বুঝবেনই না।”
খাবার মিলছে শুধু একবেলা
চাঁচল
অজয় দাস।
হরিশ্চন্দ্রপুরের অজয় দাস সহ ২৩ জন গিয়েছিলেন সুরাতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে। তিন বেলা খাবার ও ১৮৩ টাকা রোজ মিলবে বলে আশ্বাস পেয়েছিলেন। গোড়ায় তা পাচ্ছিলেনও। কিন্তু, নোট বাতিলের কয়েক দিনের মাথায় মজুরি মেলা বন্ধ হয়ে যায়। খাবারও ক্রমশ একবেলায় নেমে যায়। শেষ অবধি টিকিটের টাকা হাতে ধরিয়ে দেন ঠিকাদার। এখন এলাকায় তাঁর মা ধান কেটে সামান্য কিছু রোজগার করছেন। তা দিয়েই চলছে। জম্মু কাশ্মীর, কেরল, কর্ণাটক, দিল্লি, রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকেও অনেকে ফিরে এসেছেন এই জেলায়। অনেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। কেউ গিয়েছিলেন সোনার কাজ করতে। কেউ বা ইটভাটা, প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন। অনেকেই ফিরে আসছেন।
খালি হাতে বিভুঁইতে
তপন
কাঞ্চন বর্মন।
তপন ব্লকের অর্জুনপুর গ্রামের ২৩ বছরের যুবক কাঞ্চন বর্মন অসুস্থ হয়ে চার মাস আগে মহারাষ্ট্র থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে গত মাসে কাজ যোগ দিতে ফের মহারাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে আতান্তরে পড়েছেন। প্রাপ্য মজুরি মিলছে না। সকলকে ফিরে আসতে হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের বরসাই এলাকায় গত তিন বছর ধরে একটি লোহার গ্রিল তৈরির কারখানায় কাঞ্চনের মতো এলাকার আরও কয়েকজন যুবক ঝালাইয়ের কাজ করেন। এলাকার মন্টু রবিদাস বিশ্বনাথ ওঁরাও, তিলনের সাঞ্চু পাহানেরাও নোট সমস্যায় পড়ে মজুরির টাকা ঠিকঠাক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সকলে বাড়ি ফিরছেন বলে আত্মীয়দের ফোনে জানিয়েছেন। বাড়ির লোকের চিন্তা, বিভুঁইতে খালি হাতে কী ভাবে কাটাচ্ছেন তাঁরা সেই ভেবে।
ফেরার পরামর্শ
ইসলামপুর
জুলফিকর আলম।
মাটিকুণ্ডা সংলগ্ন নতুন ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা জুলফিকর আলম মুম্বইতে একটি জিন্স তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। নোট বাতিলের পর তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করি। হঠাৎ কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নোট বাতিলের পর এখন কাজ কমে গিয়েছে। কাজেই বেতন দিতে পারছেন না তাঁরা। আপাতত কিছু দিনের জন্য বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন। বাড়ি ফিরে এসেছি।’’ মুশকিল হল কবে সমস্যা মিটবে আলম তার বিন্দুবিসর্গ জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমি অন্য কোনও কাজ শিখিনি। কাজেই নতুন করে কাজ শিখে সেই কাজ করাও আমার পক্ষে কঠিন।’’ ইসলামপুরের বাসিন্দা ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা জাভেদ আলমও মুম্বই থেকে ফিরে এসেছেন একই পরামর্শ শুনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy