Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আলকাপের মহড়া ছেড়ে খেতই সম্বল

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও বায়না খাতায় জমা পড়েনি একটিও নাম। নোট বাতিলের জেরে দেড় মাস ধরে হাতে কোনও কাজ নেই। সংসার চালাতে আলকাপ শিল্পী চঞ্চলা সরকার, সুমিতা দাসদের তাই ঘরের পুরুষদের সঙ্গে নামতে হচ্ছে মাঠে ধান ঝাড়াইয়ের কাজে।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
Share: Save:

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও বায়না খাতায় জমা পড়েনি একটিও নাম। নোট বাতিলের জেরে দেড় মাস ধরে হাতে কোনও কাজ নেই। সংসার চালাতে আলকাপ শিল্পী চঞ্চলা সরকার, সুমিতা দাসদের তাই ঘরের পুরুষদের সঙ্গে নামতে হচ্ছে মাঠে ধান ঝাড়াইয়ের কাজে।

ভরা মরসুমে ডাক না পেয়েও যদিও রোজই নিয়ম করে হবিবপুর ব্লকের ঋষিপুরের পঞ্চানন মণ্ডলের বাড়িতে চলছে আলকাপের মহড়া। তবে আর কাজ না পেলে শুধু মহড়ায় কত দিন চলবে, তা নিয়ে প্রবল সংশয়ে ‘ভাই ভাই আলকাপ সঙ্ঘের’ শিল্পীরাও। একে জনপ্রিয়তা কমেছে, তার উপরে শিল্প বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে বিষফোড়া হয়ে গজিয়েছে নোট বাতিলের উপসর্গ।

ওই সঙ্ঘের পরিচালক তথা আলকাপ গানের অভিনেতা অনিল কর্মকার (ঘিনু) বলেন, ‘‘শীত পড়তেই আমাদের ডাক পড়ত। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা দশটি অনুষ্ঠান করেছিলাম। এ বার এখনও সরকারের একটি অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও ডাক পাইনি।’’ কেন এখনও ডাক মেলেনি? এই প্রশ্নের উত্তরে ঘিনুবাবু বলেন, ‘‘খুচরোর অভাবে ধনী, গরিব সকলেরই পকেট প্রায় শূন্য। ফলে এখন আর কেউ আনন্দ করতে চান না।’’

যদিও গত এক দশক ধরেই ক্রমশ আলকাপ গানের কদর কমছে বলে দাবি করছেন ঘিনুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ, নেপালে গিয়েও অনুষ্ঠান করেছি। মানুষ এখন আধুনিক নাচ-গানই বেশি পছন্দ করে। ফলে অস্তিত্ব সংকটের মুখে আমাদের এই গান।’’ চঞ্চলা, সুমিতারা বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ফলে কোনও অনু্ষ্ঠান নেই। তাই বাধ্য হয়েই পুরুষদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে ধান ঝাড়াই করতে নেমে পড়েছি।’’

গম্ভীরার মতো আলকাপের জন্যও বিখ্যাত মালদহ। আলকাপ শিল্পীদের কাছ থেকে জানা যায়, অবিভক্ত বাংলার রাজশাহীর বনমালি শীল আলকাপের সূচনা করেন। তিনি প্রথমে পথচলতি মানুষদের হাস্যকৌতুক করে দেখাতেন। তার পর থেকেই হবিবপুর ব্লকের ঋষিপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ চাঁদপুরে গড়ে ওঠে আলকাপ দল। ১৯৪০ সালে ওই গ্রামের নকুল কর্মকার, সিদাম মণ্ডল-সহ দশ জন মিলে দল তৈরি করে। তার পর জেলার ইংরেজবাজারের মিল্কি, পুরাতন মালদহের সাহাপুর, বৈষ্ণবনগরে হয় একের পর এক দল।

জানা গিয়েছে, এক সময়ে প্রায় ২০টি আলকাপের দল ছিল জেলায়। সমাজের বাস্তব চিত্র অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা। সেই সঙ্গে হাস্যকৌতুক করেও মানুষকে আনন্দ দিতেন। মুর্শিদাবাদ, বীরভুম, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ছাড়াও আলকাপ শিল্পীদের ডাক পড়ত বিহার এবং ঝাড়খণ্ডেও।

কেন দর্শক কমছে আলকাপের? শিল্পীরা জানান, এ বছর বিশেষ করে নোট-সমস্যার প্রভাব তো পড়ছেই। তা ছাড়া আগে এত সিনেমা হলের রমরমা বা বাড়িতে বাড়িতে টিভি ছিল না। এখন হাতে হাতে মোবাইল। ফলে কদর কমেছে আলকাপের।

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy