বেলাইন।—ছবি এএফপি।
সারা গ্রামই যেন অপেক্ষা করছিল। আনসার আলম, সামসুদ্দিন, সাহেদা খাতুনের দেহ কফিনে ভরে ফিরতেই হাহাকার শুরু হল। গ্রামের মানুষের একই কথা, এই ভয়টাই সঙ্গে নিয়ে তাঁদের জীবন কাটে। ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান ঘরের লোক। সব সময় অপেক্ষা করে থাকতে হয় তাঁদের খবরের জন্য।
যেমন, আনসার আলম (১৮), সামসুদ্দিন (২৫) এবং সাহেদা খাতুনের (৪৫) দেহ ফিরল সোমবার কফিনে ভরে। শনিবার তাঁরা নয়াদিল্লি রওনা হয়েছিলেন সীমাঞ্চল এক্সপ্রেসে। রবিবার ভোরে বিহারের হাজিপুরে ট্রেনের দুর্ঘটনায় মারা যান। ময়নাতদন্ত করার পর রেল পুলিশ দেহগুলি পরিবারের হাতে তুলে দেয়। সোমবার সকালে একে একে তিন জনের দেহ কবর দেওয়া হয়। সোমবার গোটা গ্রাম যেন বাগ্রুদ্ধ। আনসারদের সঙ্গে ছিলেন গ্রামের হায়দার আলি, কাউসার আলম, হাসিম আলম সহ সাত জন। আনসারদের কফিনবন্দি দেহের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন হায়দাররা।
হায়দার জানালেন, তিনি ছিলেন আনাসারদের পাশের বগিতে। ভোর তিনটে নাগাদ আচমকা বিস্ফোরণের মতো শব্দে কেঁপে উঠেছিলেন সকলেই। ছিটকে গিয়েছিল আনসারদের বগি। তিনি বলেন, ‘‘আনসারকে ফোন করে দেখি সমানে রিং হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলের আলো জালিয়ে গিয়ে গিয়ে দেখি তিন জনের দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই বীভৎস ছবি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।’’ হায়দার বললেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে ভিন্ রাজ্য কাজ করি। এ বার থেকে ট্রেনে উঠলেই এই দৃশ্যটা তাড়া করবে।’’
চাকুলিয়ার বিধায়ক আলি ইমরান রমজ ভিক্টর বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রেলের খোলনলচে না পাল্টিয়ে বুলেট ট্রেনের স্বপ্নে মেতেছেন।’’ তিনি জানান, মৃতদের ক্ষতিপূরণ দাবিতে রাজ্য সরকারের কাছেও আবেদন জানাবেন। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে বঞ্চিত অনেকেই। সাহেদা দীর্ঘ দিন ধরে দরবার করেও একটি ঘর পাননি। পাননি কোন সরকারি ভাতা। সাহেদার বোন রহিমা খাতুন এদিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দিদি একটি ঘরের জন্য বারবার আবেদন করে পাননি।’’ একই অভিযোগ সামসুদ্দিনের পরিবারের। ইন্দিরা আবাসের জন্য ঘর চেয়ে আবেদন করে ঘর পাননি। অবশ্য সাহাপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান বিবি মেহেরুন নেছা জানিয়ছেন, ‘‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাস হল। বিষয়টি আমার জানা নেই।’’ গোয়ালপোখোর ২ বিডিও সুপ্রিম দাস জানান, এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy