আলুর ব্যাপক উত্পাদন তো ছিলই, পাশাপাশি নিস্তেজ বাজারের পরিস্থিতি দেখে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
চাষিদের দেওয়া ঋণের টাকা কত তাড়াতাড়ি উঠে আসবে, তা নিয়ে তাঁদের সংশয় পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। যদিও ব্যাঙ্ক কর্তাদের আশা, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আলু পাঠানোর কাজ চলতে থাকলে বাজার অনেকটা তেজি হবে। চাষিরা লোকসান এড়াতে পারবেন। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “এবার আলু চাষের এলাকা বাড়ায় উত্পাদন বেশি হয়েছে। সেই কারণে দাম পড়েছে। তাই দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।”
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯০টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখে এবার চাষিদের প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা ৩১ কোটি টাকা বেশি। গত বছর আলু চাষে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সেবার দাম ভাল থাকায় ওই ঋণের ৮০ শতাংশ ফেরত এসেছে। এবার ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাঙ্ক কর্তারা জানান, আলু উত্পাদনের এলাকা বেড়েছে। ধূপগুড়ি ব্লকে ৩০টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ময়নাগুড়িতে ৩১ কোটি টাকা, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে ২৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চাষের এলাকা বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। উত্তরবঙ্গে আলু চাষে বিখ্যাত ধূপগুড়ি ব্লকে এবার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উত্পাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু হয়। এক কৃষি কর্তা জানান, গত বছর জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় আলু উত্পাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় উত্পাদন বেড়ে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একে চাষের এলাকা বৃদ্ধি তার উপরে অতি ফলনের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি আলুর দাম ২ টাকা দেখে ব্যাঙ্ক কর্তারা দুশ্চিন্তায় পড়েন। যদিও মার্চ মাসের শুরু থেকে দাম সামান্য হারে বাড়তে দেখে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। বুধবার পাইকারি বাজারে ৩ টাকা ২০ পয়সা কেজি দামে আলু বিক্রি হয়েছে। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কেজি প্রতি দাম ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার আড়াই টাকা।
সমিতির সহকারি সম্পাদক শিবু চক্রবর্তী জানান, রেলপথে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে আলু পাঠানো শুরু হতেই বাজার কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। গত ৪ মার্চ থেকে ২০ দিনে ১৬ রেক আলু অসমে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি রেকে ৫০ কেজি ওজনের ৪২ হাজার প্যাকেট আলু সরবরাহ হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এটা চলবে। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা কৃষক সভার জেলা নেতা সুভাষ রায় বলেন, “আলু অসমে যাচ্ছে, এটা চলতে থাকলে দাম বাড়বে।” একই আশায় জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানও। তিনি বলেন, “ধীরে হলেও বাজার তেজি হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy