Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রচারে মমতার সঙ্গে মন্ত্রীর ছবিতে বিতর্ক

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কারও ছবি ভোটের প্রচারের হোর্ডিং, ব্যানারে ব্যবহার করা যাবে না বলে তৃণমূলে নির্দেশ জারি হলেও শিলিগুড়ির ব্যাপারই যেন আলাদা! সেখানে হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই প্রায় সমপরিমাণ জায়গা জুড়ে দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ছবি। শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডে প্রায় একই দৃশ্য।

এমন ব্যানার ঘিরেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

এমন ব্যানার ঘিরেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৫
Share: Save:

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কারও ছবি ভোটের প্রচারের হোর্ডিং, ব্যানারে ব্যবহার করা যাবে না বলে তৃণমূলে নির্দেশ জারি হলেও শিলিগুড়ির ব্যাপারই যেন আলাদা! সেখানে হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই প্রায় সমপরিমাণ জায়গা জুড়ে দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ছবি। শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডে প্রায় একই দৃশ্য।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, কলকাতায় একদা যেমন দলনেত্রীর পরেই মুকুল রায়ের জায়গা ছিল, তেমন গৌতমবাবুও দলীয় মহলে উত্তরবঙ্গে দলনেত্রীর ‘সেকেন্ড ম্যান’ বলে পরিচিত। সে জন্যই দল নির্দেশ জারি করলেও শিলিগুড়ির ভোটপ্রার্থীদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে গৌতমবাবুর ছবিও হোর্ডিংয়ে রাখছেন। এমনকী, মন্ত্রীর স্ত্রী শুক্লা দেবীর হোর্ডিং, পোস্টারেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গৌতমবাবুর ছবিও শোভা পাচ্ছে কী করে? দলের নির্দেশ অমান্য হলেও দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তা নিয়ে দলীয় মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। গৌতমবাবুর যুক্তি, “এটা কর্মী-সমর্থকেরা করেছে। কতবার না করেছি। তবু আমার ছবি দেওয়া হোর্ডিং ব্যবহার করা হয়েছে। দ্রুত হোর্ডিং খুলে নিতে বলেছি।”

শহরের অরবিন্দপল্লি, রাজা রামমোহন রায় রোড, হাকিমপাড়া এলাকার বেশ কিছু হোর্ডিঙে মন্ত্রীর ছবি দেখা গিয়েছে। মন্ত্রী নিজে প্রথমে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন বলে প্রচার শুরু করেছিলেন। ওই ওয়ার্ডে সে সময় মন্ত্রীর ছবি দেওয়া বেশ কিছু হোর্ডিং-ফ্লেক্স লাগানো হয়। মন্ত্রীর ছবি সহ কবিতার লাইনও দেখা গিয়েছে জগদীশ ভট্টাচার্য সরণিতে। পরে দলের নির্দেশে মন্ত্রী প্রার্থী হননি। ওই ওয়ার্ডেও তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে গৌতমবাবুর বেশ কয়েকটি ছবি রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, হোর্ডিঙে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ছবি অনেক সময়েই ভয়ে লাগানো হয়েছে। কেননা, কেউই চান না মন্ত্রীর বিরাগভাজন হতে। শুধু শিলিগুড়ি নয় জলপাইগুড়িরও দু’একটি ওয়ার্ডে মন্ত্রীর ছবি লাগানো হোর্ডিং তৈরি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ছবি ব্যবহার নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের সময়ে প্রার্থীর ছবি ব্যবহারের ছাড় দেওয়া হলেও, অন্য সময়ে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সহ প্রচার চালাতে হবে বলে নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই মতো বিভিন্ন জেলায় ছবি সরানোর কাজও শুরু হয়েছে। এ দিকে, তৃণমূলের শিলিগুড়ির কয়েকজন নেতার দাবি, জেলা সভাপতির ছবি দেখে জেলার অন্য কয়েকজন নেতাও নিজেদের ছবি লাগিয়ে প্রচার অথবা শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন বলে দলেই অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে দলের নির্দেশ না মানায় কেন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, সে প্রশ্ন উঠছে শুরু করেছে তৃণমূলের অন্দরেই। মন্ত্রী গৌতমবাবুর দাবি, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কারও ছবি হোর্ডিঙে ব্যবহার করা যাবে না বলে দলের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও তাই বিশ্বাস করি।”

তৃণমূলের বড়-মাঝারি এমনকী ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের ছবি দিয়েও হোর্ডিং ফ্লেক্স বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়। তবে সম্প্রতি দলে নানা বিদ্রোহ অসন্তোষ দানা বাঁধায় শুধুমাত্র দলনেত্রীর ছবি ব্যবহার করা যাবে বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদ্য তৃণমূল ছাড়া শিলিগুড়ির এক নেতার কথায়, “উত্তরবঙ্গের দল এবং প্রশাসনের সব বিষয়ে একজনকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী খুশি না রাখলে সমস্যা হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই হয়ত তাঁর ছবি লাগানো হয়েছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE