Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

বাংলার পানে নেপাল মায়ানমারের সুপুরি

খাওয়ার শেষে আয়েশ করে এক খিলি পান মুখে দিলেন। জানতেও পারলেন না, সেই সুপুরি হয়তো এসেছে মায়ানমার বা নেপাল থেকে, চোরাই পথে।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৪
Share: Save:

খাওয়ার শেষে আয়েশ করে এক খিলি পান মুখে দিলেন। জানতেও পারলেন না, সেই সুপুরি হয়তো এসেছে মায়ানমার বা নেপাল থেকে, চোরাই পথে। দেখতে একই, দামে কম। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এই সুপুরি গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন বলছেন, সম্প্রতি কয়েকটি ক্ষেত্রে চোরাই সুপুরি পাকড়াও থেকেই বোঝা যাবে বাস্তব ছবিটা কেমন।

চোরাই সুপুরির বাজার এত ভাল কেন? গোয়েন্দাদের দাবি, এর মূল কারণ সুপুরির দাম। দেশি সুপুরি গাছ থেকে পেড়ে, শুকিয়ে, প্রাথমিক প্রক্রিয়ার পরে যখন বাজারে আসে, তার দাম হয় ৪০০ টাকা প্রতি কেজি। সেখানে চোরাই পথে একই মানের সুপুরি আসে ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে। তার থেকে দামী সুপুরিও চোরাই পথে আসে। তবে কোনওটিরও দাম ৪০০ টাকা নয়।

চকোলেট, ক্যান্ডি, টপফালি, সিয়েট— চোরাই সুপুরির হরেক নাম। এসএসবি সূত্রে দাবি, চোরা কারবারে ‘ক্যান্ডি’-র দাম ও চাহিদা সব থেকে বেশি। প্রতি কেজি গড়ে ৩৫০ টাকা। তার পরেই রয়েছে ‘টপফালি’, দাম প্রতি কেজি গড়ে ২১০ টাকা। চোরাবাজারে ‘চকোলেট’ এবং ‘সিয়েট’-এর দাম কেজি প্রতি ১০০-১৫০ টাকা। খোলা বাজারে এই দামের বিশেষ হেরফের হয় না।

কোন পথে ঢোকে এই সুপুরি? গোয়েন্দাদের সন্দেহ, মূলত তিনটি রুট দিয়ে রাজ্যে ঢুকছে মায়ানমার ও নেপালের সুপুরি। তাঁদের দাবি, প্রথমত, অসম হয়ে তুফানগঞ্জ ও আলিপুরদুয়ারের মধ্য দিয়ে সুপুরি পৌঁছয় ফালাকাটার একটি ঘাঁটিতে। সেখান থেকে চাহিদা অনুসারে যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। দ্বিতীয়ত, ভুটান হয়েও ভারতে ঢোকে মায়ানমারের সুপুরি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই রুটে চামুর্চি ও ফুন্টশোলিং হয়ে সুপুরি এসে জমা হয় তোর্সা নদী লাগোয়া জয়গাঁর দু’টি বস্তি এলাকাতে। সেখান থেকে সেগুলি চলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। তৃতীয়ত, নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি, খড়িবাড়ির বিভিন্ন এলাকা দিয়েও নেপাল থেকে সুপুরি ঢোকে রাজ্যে।

গোয়েন্দাদের মতে, ফালাকাটাই উত্তরবঙ্গের সুপুরি পাচারের সব থেকে বড় ঘাঁটি। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘একবার ব্যবসায়ীর গুদামে সুপুরি ঢুকে গেলে সেগুলি চোরাই কিনা, তা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। কারণ, কারবারের সঙ্গে এমন কিছু ব্যবসায়ী যুক্ত রয়েছে, যাদের ব্যবসার বৈধ কাগজপত্র আছে। ওই ব্যবসায়ীরা কেনাবেচার রসিদ দেখিয়ে দিতে পারেন সহজেই।’’

এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের আইজি শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বহু সুপুরি আটক করেছি। নেপাল ও ভুটান দুই সীমান্তেই নজরদারি চলছে। নেপালের সঙ্গে যৌথ টহলদারিও ব্যবস্থা করা হয়েছে। চোরাকারবার রুখতে নিয়মিত অভিযানও করা হচ্ছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার।

চোরাই সুপুরির প্রভাব কী, প্রশ্ন করায় এক গোয়েন্দা কর্তা মুচকি হেসে বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে বা দোকানে যে সুপুরি আমরা খাই, তার বেশিরভাগটাই মায়ানমার ও নেপালের। বাকিটা বুঝে নিন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Betel Nut Betel Leaf Siliguri Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE