কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণি। ফাইল ছবি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট সে মর্মে নির্দেশ দিয়েছে জানাজানি হতেই রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বিজেপি কর্মী-নেতারা প্রকাশ্যেই তা নিয়ে খুশির কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর কনভয়ে হামলার ফল কেমন হয়, তা এ বার বুঝতে পারবে তৃণমূল।’’ তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দলীয় ভাবে আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে সিবিআই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আদালতের রায়ের পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। রায়ের ফলে, প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে। আমরা যেমন ভারতীয় সংবিধানের উপরে বিশ্বাস রাখি, একই ভাবে মহামান্য উচ্চ আদালতের উপরেও বিশ্বাস রাখি। যারা প্রকৃত পক্ষে দোষী, সেদিনের ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যে দুষ্কৃতীরা যুক্ত ছিল বা অন্য যে দুষ্কৃতীরা যুক্ত ছিল তাদের নাম তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসবে। তারা শাস্তি পাবে বলে বিশ্বাস রাখি।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার দলের রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন।’’
ওই রায়ের পরে, অবশ্য তৃণমূলের কোচবিহার জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের মুখপাত্র পার্থপ্ৰতিম রায় সাংবাদিক বৈঠক করে সিবিআই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়েই বলছি, সিবিআই নিরপেক্ষ নয়। অন্তত পক্ষে গোটা দেশ ও রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বারে বারে। আমাদের রাজ্যে একই মামলায় যেখানে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেখানে বিজেপি নেতাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যদি সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করে, তা হলে বিজেপিরমুখোশ খুলে যাবে।’’ তাঁর দাবি, ঘটনার সময় দেখা যাচ্ছে নিশীথ প্রামাণিকের গাড়ি সুরক্ষিত রয়েছে, তার কিছুক্ষণ বাদে, বাড়ি ফিরে প্রতিমন্ত্রী তাঁর গাড়িতে একটি গোল চিহ্ন দেখিয়ে দাবি করেন, সেখানে গুলি করা হয়েছে। সে চিহ্ন কোথা থেকে এল, তদন্ত করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘এ বার প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে। ওই দিন বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলা হল, কেন্দ্রীয় প্ৰতিমন্ত্রীর উপরে হামলা হল। অথচ আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হল। ২১ জনকে গ্রেফতার করা হল।’’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার বুড়িরহাটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, কনভয় যাওয়ার রাস্তায় কালো পতাকা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের ব্যারিকেড করেছিল পুলিশ। নিশীথের গাড়ি সেখানে পৌঁছতে বাধে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ। অভিযোগ, দুই শিবিরই একে অন্যকে তাক করে ঢিল ছোড়ে। ঢিলের ঘায়ে সাংসদের গাড়ির কাচ ভাঙে। নিশীথ অবশ্য দাবি করেন, তাঁর গাড়িতে গুলির দাগ রয়েছে। গুলি চালিয়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে ‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা’। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের একটি কার্যালয় ও কয়েকটি মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে ‘বিজেপির লোকেরা’, হামলাও তারাই চালিয়েছে। বোমা ছোড়ার অভিযোগ করেছে দু’পক্ষ। লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। নিশীথ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, পুলিশকে জানিয়েই কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। তার পরেও পুলিশের সামনে তাঁর কনভয়ে ‘হামলা’ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy